গণপিটুনিতে আহত যুবক পুলিশ হেফাজতে নিহত, ক্যাম্প ইনচার্জ গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় মো. আব্দুল্লাহ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের মামলায় এক পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন।
উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মহিম উদ্দিন নবীনগরের ছলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিলেন। গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতে তোলা হলে আজ সোমবার সকালে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
নিহত আব্দুল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের আবুল মিয়ার ছেলে। রোববার রাতে নিহত যুবকের বড় ভাই শাকিল মিয়া বাদী হয়ে মহিম উদ্দিনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন।
এজাহারভুক্ত বাকি তিন আসামি হলেন—নবীনগর উপজেলার ছলিমগঞ্জের বাড়াইলের তবি মিয়া (৩৪), একই গ্রামের আল আমিন (৩২) ও বাঞ্ছারামপুরের বাহেরচরের আয়নাল হক (৩০)। এছাড়া, অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, আবদুল্লাহকে আদালতে না তুলে অবৈধভাবে চার দিন পুলিশ ক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, কোনো মামলা হয়নি—কিছুই না। তারপরও পুলিশ রাত-দিন জেরা করেছে, আর নির্যাতন করেছে। এক পর্যায়ে শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং সেখান থেকে আবদুল্লাহকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর নবীনগরের ছলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামের বাসিন্দা তবি মিয়ার বাড়ি থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা চুরি হয়। তবি মিয়ার পরিবারের সদস্যরা একটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন, যেখানে মুখোশ পরা একজনকে দেখা যায়। তাদের সন্দেহ, আব্দুল্লাহ চুরির ঘটনায় জড়িত। ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে আবদুল্লাহকে প্রথমে ছলিমগঞ্জ বাজারে এবং পরবর্তীতে তবি মিয়ার বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্লায়ার্স দিয়ে আবদুল্লাহর হাতের নখ ও কপালের চামড়া উপড়ে নেওয়া হয়। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ছলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে সোপর্দ করা হয়।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত আব্দুল্লাহকে নবীনগর উপজেলার ছলিমগঞ্জ অস্থায়ী ক্যাম্পে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিল।
আব্দুল্লাহর মা জোৎস্না বেগম বলেন, 'আমার ছেলে অপরাধী হলে আইন তাকে সাজা দিতো। কেন এভাবে মরতে হলো?'
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এহতেশামুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আব্দুল্লাহকে অবৈধভাবে
ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছিল। ওই যুবকের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। পুলিশ সদস্যের এই অপরাধ স্পষ্ট। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'
'তিনি পুলিশ বিভাগ থেকে কোনো সুবিধা পাবেন না। অপরাধী যেই হোক, তিনি অপরাধী,' বলেন এহতেশামুল।
এহতেশামুল জানান, এজাহারে হেফাজতে মৃত্যুর ব্যাপারটা আছে, আবার গণপিটুনিতে তার ভাইকে আহত করা হয়েছে সেই বিষয়টিও আছে। মামলা রেকর্ড হয়েছে।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের যে ভুল-ত্রুটিগুলো ছিল অথবা সেই অফিসারের দায়িত্বহীনতার প্রমাণ পাব, সেই বিভাগীয় মামলা ফৌজদারি মামলার সঙ্গে চলবে।'
এদিকে, আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় জনতা সোমবার সকালে ছলিমগঞ্জ ক্যাম্প ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর স্থানীয় প্রশাসন ফাঁড়িটি বন্ধ করে দেয় এবং সেনা মোতায়েন করা হয়।


Comments