বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা শিক্ষিকা স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় কারাগারে

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরীফ বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা এক শিক্ষিকাকে স্বর্ণ চোরাচালানের মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তবে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে চোরাচালানে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি। তার বিরুদ্ধে আগে কোনো অপরাধের রেকর্ডও নেই।
ভুক্তভোগী ওই নারী দর্শনা উপজেলা প্রশাসনের অধীনে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গানের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করতেন। শরীফুজ্জামানের সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরদিন ৭ অক্টোবর ভোরে পুলিশ ওই শিক্ষিকাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিনহাজ-উল-ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর দায়ের হওয়া একটি স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় ওই শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসমা বেগম নামের আরেক আসামি ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তার নাম উল্লেখ করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, পুলিশ গত ২৯ সেপ্টেম্বর তিনটি সোনার বারসহ আসমাকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসমা বলেন, দর্শনা স্কুলে ওই শিক্ষিকার কাছে তার মেয়েও গান শেখে। সেই সূত্রে তার সঙ্গে পরিচয়। আসমার অভিযোগ, ওই শিক্ষিকা তাকে চোরাচালানের কাজে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ-উল-ইসলাম স্বীকার করেন, তদন্তকারীরা এখনো চোরাচালানের সঙ্গে শিক্ষিকার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাননি। আসমার সঙ্গের পুতুলের কোনো সম্পর্ক আদৌও ছিল কিনা, সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের রেকর্ডও পাওয়া যায়নি। তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলে অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে।'
যে উচ্চবিদ্যালয়ে ওই শিক্ষিকা পড়াতেন, সেখানকার প্রধান শিক্ষক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি সপ্তাহে একদিন ক্লাস নিতে আসতেন। আসমা বেগমের মেয়ে নামে কাউকে আমি চিনি না। দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থীর এখানে গান শেখার কথা নয়। আমাদের স্কুল ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু।'
ভুক্তভোগী শিক্ষিকার গ্রামের অন্তত ৩০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেছে এই প্রতিবেদক। তারা সবাই বলেছেন, ওই শিক্ষিকার পক্ষে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকা বিশ্বাসযোগ্য নয়। চায়ের দোকানদার রহিমা বেগম বলেন, 'মেয়েটাকে চোখের সামনে বড় হতে দেখেছি। তার নামে কোনো দিন খারাপ কিছু শুনিনি।'
চুয়াডাঙ্গার একজন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী ধীরু বাউল বলেন, 'এখানে পরিষ্কারভাবে রাজনীতি খেলা হচ্ছে। আমি তাকে কখনো কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে দেখিনি। এখন আমরা মুখ খুলতেও পারছি না। পরিবেশটা এমন যে আমরা নিজেরাই ভয়ে আছি।'
শিক্ষিকার ভাই অভিযোগ করে বলেন, তার বোনকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমার বোন কেমন পরিবারের মেয়ে, তা সবাই জানে।' তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, গত দুই দিনে তারা কয়েকজন আইনজীবীর কাছে গেলেও কেউ মামলা লড়তে রাজি হননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'সে কী এমন অপরাধ করেছে যে মামলা লড়তে ঝামেলা?'
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপি নেতা শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, 'ওই নারী আমার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, পুলিশ, আদালতে অভিযোগ করতে গিয়েছিল, কিন্তু কেউ তা গ্রহণ করেনি। তারা প্রমাণ চেয়েছিল, যা সে দিতে পারেনি।' আসন্ন নির্বাচনে তার দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে এবং তাকে ফাঁসানোর জন্য এটি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ বলে তিনি দাবি করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকার মামলা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা ডেইলি স্টারকে বলেন, এই বিষয়ে থানায় খোঁজ নিতে পারেন। আমার জানা নেই।'
চুয়াডাঙ্গা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মাহমুদ শামিম রেজা বলেন, 'আমি জানি না উনারা কোন আইনজীবীর কাছে গিয়েছিলেন। আইনজীবী না পাওয়ার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়।'
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুর রহমান বলেন, 'আমাদের কয়েক দিন সময় দিন, আশা করি আমরা একটি ফলাফলে পৌঁছাতে পারব।'
Comments