৬ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ: এস আলম-স্ত্রীসহ ৯৫ জনের বিরুদ্ধে ৩ মামলা
জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছয় হাজার ২৪৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ ৯৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ রোববার দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে মামলাগুলো করা হয়। দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ।
তিনি বলেন, তিন মামলায় এস আলম গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল মিল ও এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে ঋণ নিয়ে ছয় হাজার ২৪৩ কোটি ৭৮ লাখ তিন হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন—সাইফুল আলমের ভাই আলম ট্রেডিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান গণি, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাশেদুল আলম, পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস ছবুর, সোনালী ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর মো. শহিদুল আলম, জনতা ব্যাংকের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সিরাজুল করিম মজুমদার এবং সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল আহছানসহ এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও জনতা ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা।
এজাহারে বলা হয়, ছয় হাজার ২৪৩ কোটি ৭৮ লাখ তিন হাজার টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম চৌমুহনীর সাধারণ জীবন বিমা করপোরেশন শাখা থেকে। ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৬ মার্চের মধ্যে এ ঋণ নেওয়া হয়।
এতে আরও বলা হয়, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের নামে জনতা ব্যাংক থেকে দুই হাজার তিন কোটি ৪৮ লাখ, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের নামে দুই হাজার ২৯৭ কোটি ৭৪ লাখ, এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে এক হাজার ৯৪২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শাখা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপর্যাপ্ত জামানতের বিপরীতে ঋণ বর্ধিতকরণ ও নবায়নের সুপারিশ করেন, যা আত্মসাতের পথ সহজ করে।
দুদক জানায়, জনতা ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটি ও পরিচালনা পর্ষদ চাইলে প্রস্তাবটি নাকচ করতে পারত বা বাংলাদেশ ব্যাংকে অনাপত্তির জন্য পাঠাতে পারত। কিন্তু তা না করায় ঋণ নবায়ন এবং আত্মসাতে সহায়তা হয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভেঙে এস আলম গ্রুপভুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে ঋণ নবায়ন ও বর্ধিতকরণের নামে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করেছে।
এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর একই ব্যাংক থেকে আরও দুই হাজার ৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সাইফুল আলমসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

Comments