ডেইলি স্টার-প্রথম আলোয় হামলা: ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত ৩১, গ্রেপ্তার ৯
সম্প্রতি জাতীয় দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও উদীচীর কার্যালয়ে হামলায় জড়িত সন্দেহে ভিডিও ফুটেজ দেখে ৩১ জনকে শনাক্ত ও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ওই নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন—মো. কাশেম ফারুক, মো. সাইদুর রহমান, রাকিব হোসেন, মো. নাইম, ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, মো. সোহেল রানা এবং মো. শফিকুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার কাশেম ফারুক বগুড়ার আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র এবং ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা। মো. সাইদুর রহমান ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নোয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা।
গ্রেপ্তার শেরপুরের বাসিন্দা রাকিব হোসেন দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত হয়েছেন। তার ফেসবুক আইডিতে উস্কানিমূলক পোস্ট ছিল এবং জাতীয় দৈনিক দুটির ধ্বংসস্তূপের ছবি তুলে পোস্টও করা হয়।
ঢাকার তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. নাইমকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় এ ঘটনায় লুট হওয়া ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাইম স্বীকার করেছেন, তিনি মোট ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা লুট করেছেন। ওই টাকা দিয়ে তিনি মোহাম্মদপুর থেকে একটি টিভি ও ফ্রিজ কিনেছিলেন, যা ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে।
ঢাকার কারওয়ান বাজার রেললাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার মো. সোহেল রানার বিরুদ্ধে মাদকসহ অন্যান্য আইনে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা আছে।
একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুরোনো দুটি মামলা আছে।
গ্রেপ্তার অন্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এছাড়া পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের তৎপরতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন, আসন্ন বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এছাড়া, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও তদন্তের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করা হয়।
এদিকে চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের কাছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
রোববার বিকেলের এ বৈঠকে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।

Comments