ডেইলি স্টার অফিসে অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের অভিযোগে ৩৫০-৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় দ্য ডেইলি স্টার অফিসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় ৩৫০-৪০০ জনের বিরুদ্ধে সোমবার মামলা করা হয়েছে।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমা বলেন, দণ্ডবিধি, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগের মধ্যে রয়েছে দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়া, সরকারি কর্মকর্তাদের বাধা দেওয়া, অবৈধ অনুপ্রবেশ, লুটপাট, ভাঙচুর, হত্যার উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগ, ভয় দেখানো এবং প্রমাণ ধ্বংস করা—সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া ও অফিসের কার্যক্রম ব্যাহত করার লক্ষ্যে এসব করা হয়েছে।
মামলায় কয়েকজনকে অনলাইনে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নির্দেশনা প্রদান এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগও আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয়ে সমন্বিত হামলা করা হয় এবং অফিস ভাঙচুর করে, মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে, ভবনে আগুন দেওয়া হয়। জ্বলতে থাকা দ্য ডেইলি স্টার ভবনের ভেতরে সাংবাদিক ও কর্মীরা আটকে ছিলেন কয়েক ঘণ্টা।
দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব অপারেশনস মিজানুর রহমান ৩৫০-৪০০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেছেন।
মামলার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাত ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে দেশিয় অস্ত্র, লাঠি ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে হামলাকারীরা দ্য ডেইলি স্টার ভবনের বাইরে জড়ো হয়ে সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক স্লোগান দেয়। এর আগে, কিছু অনলাইন কর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় উস্কানিমূলক বার্তা পোস্ট করে জনতাকে আক্রমণ চালানোর জন্য উৎসাহিত করে।
আনুমানিক ১২টা ৩৫ মিনিটে একটি দল জোরপূর্বক স্টিলের গেট এবং কাচের দরজা ভেঙে অফিস প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। ভেতরে, তারা কর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে, অফিসের সম্পত্তি ভাঙচুর করে, মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং আসবাবপত্র ও নথিপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মূল্যের ২০০টিরও বেশি কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, প্রিন্টার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়াও, বেশ কয়েকটি লকারে সংরক্ষিত প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লুট করা হয়েছে।
হামলাকারীরা ভবনের নিচতলা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টিং রেকর্ড এবং ট্যাক্স ফাইলসহ সম্পদ ও নথিপত্রের মারাত্মক ক্ষতি করে।
অন্যান্য তলায়ও ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আক্রমণকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ভবনের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় এয়ার কন্ডিশনিং, লিফট ও বৈদ্যুতিক তার ধ্বংস করে এবং বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। তারা একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা এবং নেটওয়ার্ক রেকর্ডারও ধ্বংস করে, যার ফলে প্রমাণ সংগ্রহ ব্যাহত হয়।
মোট আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকার, যা চূড়ান্ত মূল্যায়নে আরও বাড়তে পারে।
ভবনে আগুনের কারণে আশেপাশের ভবনগুলোও হুমকির মুখে পড়ে এবং আক্রমণকারীরা ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ঘটনাস্থলে প্রবেশে বাধা দেয়। অবশেষে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে হামলাকারীরা ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সেখান থেকে চলে যায়।
এ ঘটনা সাংবাদিক এবং কর্মচারীদের জীবনকে গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রায় ৩০ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
হামলার কারণে ১৯ ডিসেম্বর দ্য ডেইলি স্টার মুদ্রিত সংস্করণ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয় এবং অনলাইন কার্যক্রমও ১৭ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়।


Comments