যে যেভাবে পারছে সেভাবে চর দখলের চেষ্টা করছে: হাতিয়ার ইউএনও
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চর দখল নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
এ ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি। ময়নাতদন্তের জন্য পাঁচজনের মরদেহ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে হাতিয়া থানা পুলিশ।
হাতিয়া থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাতিয়া উপজেলার মেঘনা নদী থেকে জেগে ওঠা সুখচর ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন জাগলার চরের জমি দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে গতকাল ওই সংঘর্ষ হয়।
জানতে চাইলে হাতিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। যে যেভাবে পারছে সেভাবে দখলের চেষ্টা করছে। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় আলা উদ্দিন ও সামছু বাহিনী চর দখল নিয়েই সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষের পর ওই চরে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।'
পুলিশ জানায়, জাগলার চরের জমি দখল নিয়ে স্থানীয় আলা উদ্দিন ডাকাত ও কোপা সামছু বাহিনীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিকবার চর দখল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জাগলার চরের এক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আলা উদ্দিন ও কোপা সামছু বাহিনীর লোকজন ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বৈঠকে বসে। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তারপর একপর্যায়ে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। গুলিতে ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ৫ জন নিহত হন।
নিহতরা হলেন—সুখচর ইউনিয়নের আলা উদ্দিন (৩৫), সামছু ডাকাতের ছেলে মোবারক হোসেন (২৩), হাতিয়া পৌরসভার লক্ষীদিয়া মহল্লার হক সাব (৫৫), সুবর্ণচর উপজেলার দক্ষিণচর মজিদ গ্রামের আবুল কাশেম (৬৩) ও চানন্দী ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন (৫০)।
সংঘর্ষের পর গুরুতর আহত একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আহত নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দা সোহরাব উদ্দিন (২৮) হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
বুধবার বিকেলে কথা হয় নিহত হক সাবের ছেলে মো. রুবেলের (৩০) সঙ্গে। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাবা জমি কেনার জন্য জাগলার চর গিয়েছিলেন।'
নিহত কামাল উদ্দিনের স্বজন মো. কাউছার বলেন, কামালও জমি কেনার জন্য জাগলার চর গিয়েছিলেন।
কারা সেখানে জমি বিক্রি করে, এমন প্রশ্নের জবাবে কাউছার বলেন, 'জমি কারা বিক্রি করে আমি জানি না।
নিহত আলা উদ্দিনের বাবা মহি উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাগলার চরে ৩-৪টি বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। গত ৪-৫ মাস ধরে তারা চরে আস্তানা গেড়েছে। চর নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়েছে। একটি পক্ষ চট্টগ্রাম থেকে আলা উদ্দিনকে ডেকে নিয়ে এসে গুলি করে হত্যা করেছে।
হাতিয়া থানার (ওসি) মো. সাইফুল আলম বলেন, 'নিহতদের পরিবার দাফন শেষে থানায় মামলা করবে। আহত ব্যক্তি সুস্থ হলে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।'
জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ-প্রশাসন) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, 'মঙ্গলবার রাত থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে যৌথবাহিনী কাজ করছে।'
ইউএনও মো. আলাউদ্দিন বলেন, 'হাতিয়া উপজেলায় সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড) নেই। ইউএনও হিসেবে আমাকেই সব সামলাতে হচ্ছে। চরগুলো উপজেলা সদর থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দুরে। সেখানে যেতে হলে স্পিডবোট ও জনবল দরকার।'
'কিছুদিন আগে তমরদ্দি ইউনিয়নের চর আতাউরে ও এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেবার খবর পেয়ে আমি হস্তক্ষেপ করায় তে তা আর সংঘর্ষে রুপ নেয়নি,' যোগ করেন তিনি।

Comments