নারায়ণগঞ্জের ওসমান ভাইদের সামনে ‘সহজ পথ’

এ কে এম শামীম ওসমান (বামে) ও এ কে এম সেলিম ওসমান।

শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এ কে এম শামীম ওসমান ও তার বড় ভাই জাতীয় পার্টির এ কে এম সেলিম ওসমানের জন্য এবারের নির্বাচন অনেকটা সহজ হয়ে গেছে।

এই দুই ভাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যথাক্রমে নারায়ণগঞ্জ-৪ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট আসন দুটির স্থানীয়দের ভাষ্য, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের বিপরীতে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের কিংবা তাদের দলের বিশেষ পরিচিতি ভোটারদের মাঝে নেই।

গতকাল রোববার ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন, নারায়ণগঞ্জের পাঁচ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে চূড়ান্তভাবে ৩৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবেন। আজ তাদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানান জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।

নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের শামীম ওসমানসহ আট জন প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছেব। শেষ দিনে এই আসনে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ছালাউদ্দিন খোকা মোল্লা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে ছালাউদ্দিন খোকা মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দলীয় সিদ্ধান্ত নয়, ব্যক্তিগত কারণে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।'

কাগজে-কলমে আসনটিতে তৃণমূল বিএনপি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিসহ আরও সাত জন প্রার্থী থাকলেও তারা তিন বারের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের শক্ত প্রতিদ্বদ্বী হয়ে উঠতে পারবেন না বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

একই পরিস্থিতি শামীম ওসমানের বড় ভাই নিট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমানের নির্বাচনী আসনেও। এই আসনে তৃণমূল বিএনপি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির তিন জন প্রার্থী থাকলেও তারা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমানকে হারানোর মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নন।

আসনটিতে শুরু থেকেই কোনো প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। যদিও সদর ও বন্দর থানা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রবীণ ও নবীন রাজনীতিক প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।

গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মহাজোটে থাকায় জাতীয় পার্টিকে এই আসন ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ এই আসনটিতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর একবার বিএনপি এবং তিন বার জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হয় আসনটি থেকে।

জানতে চাইলে সেলিম ওসমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিদ্বন্দ্বী তো প্রতিদ্বন্দ্বীই৷ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তো আছে। তারা না থাকলে তো নির্বাচনের আমেজ থাকতো না। যারা প্রার্থী আছেন সকলকে আমি সম্মান করি। নির্বাচনে জনগণ আনন্দ করতে পারবে, এটাই বড় কথা।'

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি সারা বাংলাদেশেরই চিত্র। প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ তো দূরের কথা একটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ কোনো নির্বাচনও হচ্ছে না। ক্ষমতাসীনরাই মূলত নির্বাচনটা করছে তাদের মতো করে। তাদের বিপরীতে যারা আছেন তারা এক ধরনের ডামি প্রার্থীই বলা চলে। আর নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের একটা প্রভাব রয়েছে। তাদের বিপরীতে গিয়ে প্রার্থী হবেন এমন সাহস অনেকেই করতে পারেন না। সে কারণে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনটা একেবারেই নিরুত্তাপ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন।'

'এটা জনগণের জন্য সুখকর নয়। কেননা নির্বাচন বলতে জনগণ বোঝে বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া। যেহেতু বিকল্প নেই সুতরাং তারা ভোটকেন্দ্রে যেতেই আগ্রহী হবে না বলে মনে করি।'

Comments

The Daily Star  | English

Jamaat rally commences at Suhrawardy Udyan

Supporters continued to arrive at the venue in processions, chanting slogans and carrying banners in support of the demands

2h ago