দেশে প্রতি ৫ শিশুর ১ জন দারিদ্র্য-জলবায়ু ঝুঁকিতে: গবেষণা

স্টার ফাইল ছবি

বাংলাদেশে প্রতি ৫ শিশুর মধ্যে একজন দারিদ্র্য ও উচ্চ জলবায়ু ঝুঁকি নিয়ে জীবনযাপন করছে বলে নতুন এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

'জেনারেশন হোপ: বৈশ্বিক জলবায়ু ও বৈষম্য সংকট অবসানের ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন কারণ' শীর্ষক সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১ কোটিরও বেশি শিশু এই দ্বৈত সমস্যার মুখোমুখি।

এতে বলা হয়, 'বাংলাদেশে মোট শিশু জনসংখ্যার ২১ শতাংশ দারিদ্র্য ও উচ্চ জলবায়ু ঝুঁকির প্রভাব নিয়ে বসবাস করছে।'

বাংলাদেশে শিশু জনসংখ্যা ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৩২ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সেই হিসাবে মোট শিশু জনসংখ্যার ২১ শতাংশ হলো ১ কোটি ১১ লাখ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এশিয়াজুড়ে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন শিশু দারিদ্র্য ও জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে।

সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের হিউম্যানিটেরিয়ান ডিরেক্টর মোস্তাক হোসেন বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে ২ কোটি মানুষ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলবায়ু অভিবাসী হবে এবং এর মধ্যে ৪০ শতাংশই হবে শিশু। শিশুদের এ অবস্থানের কারণ আমরা আমাদের পরিকল্পনা প্রক্রিয়া, কৌশল বা নির্দেশিকাগুলোতে তাদের পরিস্থিতির ওপর আলাদাভাবে জোর দিই না।'

'তবে, এটা ভালো বিষয় যে, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার খসড়ায় শিশু ও তরুণদের গুরুত্ব সহকারে ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে', বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'ভবিষ্যৎ জলবায়ু নেতা তৈরি করতে সেভ দ্য চিলড্রেন ছাত্র ও তরুণদের জলবায়ু সংগঠনগুলোর সঙ্গে মিলে কাজ করে, যাতে তারা ভবিষ্যতের জলবায়ু ঝুঁকি থেকে শিশুদের রক্ষায় আরও ভালোভাবে সজ্জিত হতে পারে।'

ভ্রিজে ইউনিভার্সিটি ইন ব্রাসেলসের গবেষকদের মাধ্যমে জলবায়ু মডেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেভ দ্য চিলড্রেন প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এতে দেখা গেছে, বিশ্বে ৭৭ দশমিক ৪ কোটি শিশু এই উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপের মধ্যে পড়েছে।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে দক্ষিণ সুদানের শিশুরা। সেদেশের ৮৭ শতাংশ শিশু এ ঝুঁকিতে আছে। আর আফ্রিকার ৮৫ শতাংশ ও মোজাম্বিকের ৮০ শতাংশ শিশু এ ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভারতে দারিদ্র্য ও জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ২২ কোটি ৩০ লাখ শিশু। এর পরেই নাইজেরিয়া ও ইথিওপিয়ায় যথাক্রমে ৫ কোটি ৮০ লাখ ও ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু রয়েছে একই ঝুঁকিতে রয়েছে।

সেভ দ্য চিলড্রেন সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, জলবায়ু ও বৈষম্য সংকট যদি জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা না হয়, তাহলে মানব সংকটের তীব্রতা ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে।

সেভ দ্য চিলড্রেন ১৫৯টি দেশের ১ হাজার ৯২৫টি উপ-জাতীয় অঞ্চলে জলবায়ু ও দারিদ্র্য প্রভাবে থাকা শিশুদের সংখ্যার অনুপাত অনুমান করেছে। বিশ্বের মোট শিশু জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশই তারা কাভার করেছে।

উচ্চ জলবায়ু ঝুঁকি ও দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে বসবাস করা প্রায় ১২১ মিলিয়ন শিশুর বসবাস উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে। আর প্রায় ২৮ মিলিয়ন শিশুর বসবাস ধনী দেশগুলোতে।

বিশ্বব্যাপী এ ঝুঁকির মধ্যে থাকা প্রতি ৫ শিশুর মধ্যে ২ জনেরও বেশি (১২ দশমিক ৩ মিলিয়ন) যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যে বাস করে।

উপরন্তু, বিশ্বব্যাপী ১৮৩ মিলিয়ন শিশু উচ্চ জলবায়ু ঝুঁকি, দারিদ্র্য ও দ্বন্দ্ব— ত্রিমুখী এ হুমকির মধ্যে আছে।

মোট শিশু জনসংখ্যা বিবেচনায় বুরুন্ডি (৬৩ শতাংশ), আফগানিস্তান (৫৫ শতাংশ) ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র (৪১ শতাংশ) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ।

সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইঙ্গার অ্যাশিং বলেন, 'অসাম্যতা সারা বিশ্বেই জলবায়ু জরুরি অবস্থা ও এর প্রভাবকে আরও গভীর করে তুলছে। বিশেষ করে শিশু ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

6h ago