খেলাপি ঋণের এক শতাংশের জন্যও সাধারণ মানুষ দায়ী নয়: রাষ্ট্রপতি

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: বাসস

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, 'খেলাপি ঋণের এক শতাংশের জন্যও সাধারণ মানুষ দায়ী নয়। বড় বড় ব্যবসায়ী শিল্পপতিরাই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপি হন। তারা ঋণ নেনই না দেয়ার জন্য। অবশ্য এর সাথে একশ্রেণির ব্যাংকারদেরও যোগসাজস থাকে।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ তার ভাষণে আজ শনিবার এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা ব্যবসার শুরু করেই চিন্তা করে কীভাবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া যায়। নীতি-নৈতিকতাকে বাদ দিয়ে কীভাবে শুধু নিজে বড়লোক হতে পারবে সেই চিন্তাভাবনায় ব্যস্ত থাকে।

তিনি বলেন, একই কথা চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। তারাও চাকরিতে ঢুকেই কীভাবে গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া যায় সেই চিন্তায় বিভোর থাকেন। ভুলেই যান যে তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ও জনগণের সেবক। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য অনেক সময় দেশ ও জাতির বড়ো স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতেও পিছপা হন না।

এজন্য দুর্নীতি উন্নয়ন অগ্রগতির পথে অন্যতম বড় অন্তরায় জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রত্যাশিত জানিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করার আহ্বান জানান মো. আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, ইদানিংকালে পত্রপত্রিকা খুললেই দেখা যায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজির নেতিবাচক খবর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপাচার্য ও শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতার খবরই বড় করে ছাপা হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তির অপকর্ম ও অদক্ষতা গোটা শিক্ষক সমাজের মর্যাদাকে ম্লান করছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আর শিক্ষার্থীদের মূল কাজ লেখাপড়া ও জ্ঞান অর্জন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। পড়াশোনার জায়গাটা ঠিক রেখে তার পরে রাজনীতি, সমাজসেবা, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে নিজেদের যুক্ত করতে পারেন। কোনোভাবেই লেখাপড়ার ক্ষেত্রে কমপ্রোমাইজ করা যাবে না। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়াকে কমপ্রোমাইজ করে শিক্ষা বহির্ভূত কাজে সময় দেওয়া হচ্ছে বেশি। যে কারণে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে প্রথম এক হাজারের মধ্যেও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না।

এসময় ছাত্ররাজনীতি নিয়েও কথা বলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, 'প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এসব শিক্ষার প্রধান ক্ষেত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আজকাল রাজনীতিতে ক্ষমতা আর অর্থ-বিত্তের দাপটই নিয়ামক শক্তি হিসাবে অনেক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ছাত্র রাজনীতিতেও এসব অশুভ ছায়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দখলবাজি আর চাঁদাবাজির কারণে ছাত্ররাজনীতিকে এখন আর মানুষ আগের মতো সম্মানের চোখে না দেখে নেতিবাচকভাবে দেখে। এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুখকর নয়।'

ভাষণে তিনি বলেন, প্রতি জেলায় বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি দেশে অনেকগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধার সম্প্রসারণ নয়, শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষ সাধনেও পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্য অর্জনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিজেদের শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নিরন্তর গবেষণা। আমাদের তরুণরা যথেষ্ট মেধাবী। নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তারা তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। এসব তরুণদের যথাযথ পরিচর্যার জন্য আমাদের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের সকলেরই পরমত-সহিষ্ণু, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সংবেদনশীল হওয়া জরুরি। এসবের মধ্য দিয়েই সমাজ এগিয়ে যায়। প্রথাগত রীতি-নীতির পাশাপাশি সংস্কারমূলক চিন্তা-ভাবনাও ধারণ করতে হবে। পরিমিত-পরিশীলিত আচার-আচরণ এবং রুচি-ঔচিত্যবোধের উদারতায় নিজের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

ACC won’t need approval to sue govt officials

The Anti-Corruption Commission will no longer require government approval to file cases against judges and public servants, according to the draft ACC Ordinance 2025.

8h ago