অবরোধে মালিকদের বাস চালাতে চাপ, যাত্রীশূন্য টার্মিনাল

যাত্রীশূন্য গাবতলী বাস টার্মিনাল। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিনে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার রুটে খুব অল্পসংখ্যক বাস ছেড়েছে। আজ সরেজমিনে পরিদর্শন করে গাবতলী টার্মিনালের এই চিত্র দেখা গেছে। যদিও বাস চালু রাখতে পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠন থেকে চাপ ছিল।

টার্মিনাল সূত্রগুলো জানায়, গাবতলী থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তজেলা রুটে ৪০০-৫০০ বাস ছাড়ে। কিন্তু আজ অবরোধের প্রথম দিনে ২০টিরও কম বাস ছেড়েছে। যে বাসগুলো ছেড়েছে সেগুলোর সব আসনে যাত্রী ছিল না।

উদাহরণ হিসেবে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কথা বলা যায়। প্রতিষ্ঠানটির গাবতলী কাউন্টারের একাধিক কর্মচারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাবতলী থেকে তাদের একটি বাসও ছাড়েনি।

গতকাল সোমবার ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন দিনের অবরোধের মধ্যে সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, অবরোধের মধ্যেও সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক রাখার জন্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গাবতলী টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টারের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবরোধের মধ্যে বাস চালানোর জন্য গতকাল থেকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের দিক থেকে প্রবল চাপ ছিল। রাস্তায় বাস ভাঙচুর বা আগুন দেওয়া হলে ক্ষতিপূরণেরও আশ্বাস ছিল।

বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিনে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল। ৩১ অক্টোবর ২০২৩। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

এত চাপ ও আশ্বাসের পরও বাস না চালানোর কারণ হিসেবে তারা বলেন, একটি ৪০ সিটের বাসে ৩২ জনের কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করলে লোকসান গুণতে হয়। টিকেট বিক্রি থেকে যে টাকা আসে এর বড় একটি অংশ ডিজেল, সড়ক ও সেতুর টোল, চালক ও তার সহকারীদের মজুরি বাবদ খরচ হয়ে যায়। কম যাত্রী নিয়ে বাস চালালে যে লোকসান হবে সে ব্যাপারেও ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই আশ্বাসে আস্থা না থাকায় বেশিরভাগ মালিক বাস চালাতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীদের একজন বলেন, সিট সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পাওয়া গেলেও তারা বাস চালাতেন। কিন্তু কোনো রুটেই একটি বাসের জন্য পাঁচ-সাত জনের বেশি যাত্রী পাওয়া যায়নি। তবে রাতে ১৫ জন যাত্রী পাওয়া গেলেও তারা বাস চালানোর চেষ্টা করবেন।

বিকেলে গাবতলীতে শ্যামলী পরিবহনের তিনটি কাউন্টের গিয়ে কথা বলে জানা যায়, দিনে বাস চালাতে তাদের ওপরও চাপ ছিল। তারা সিদ্ধান্ত নেন, অন্তত ২০ জন যাত্রী পেলেও বাস চালাবেন। বিকেল পর্যন্ত তাদের মাত্র একটি বাস ছেড়েছে। দুপুর সোয়া ১২টায় ২১ জন যাত্রী নিয়ে নিয়ে গাইবান্ধার উদ্দেশে বাসটি ছাড়ে। বিকেলে ও রাতে তাদের বেশ কিছু বাস ছাড়ার কথা রয়েছে। তবে ঢাকায় অন্যান্য কাউন্টার থেকে শ্যামলী পরিবহনের কয়েকটি বাস ছেড়েছে বলেও জানান তারা।

বাংলাদেশ বাস ও ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হান আজ সন্ধ্যায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যাত্রী সংকটের কারণে আজকে গাবতলী টার্মিনাল থেকে খুবই অল্প সংখ্যক বাস ছেড়েছে। তবে রাতে কিছু বাস ছাড়বে।'

বাস চালাতে চাপ থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাসের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে মৌখিক আশ্বাস আছে। কিন্তু ঝুঁকি নেবে কে?'

কম যাত্রী নিয়ে বাস চালালেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এমন আশ্বাস থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, 'এ ব্যাপারে আমাদেরকে কেউ কিছু বলেনি।'

Comments

The Daily Star  | English

US tariff at 20% 'satisfactory', says Khosru

Will comment after knowing full details of the deal

52m ago