৮ ফুটের রাস্তা নেমেছে ‘এক ফুটে’

৮ ফুটের রাস্তা নেমেছে ‘এক ফুটে’
নরসিংদী সদর উপজেলার চরদিঘলদির রাস্তা। ছবি: স্টার

নরসিংদী সদর উপজেলার চরদিঘলদির রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় এক যুগের বেশি সময় আগে। সংস্কারের অভাবে কোথাও কোথাও ভেঙে আট ফুটের রাস্তা এক ফুট হয়ে গেছে।

জোড়াতালি দিয়েও এসব সড়ক ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ভাঙা অংশ দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পার হতে গিয়ে পড়ে গিয়ে যাত্রীদের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এ দিকে, রাস্তা নির্মাণের পর সংস্কারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এতে, এলাকাবাসীর ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।

শুধু চরদিঘলদি নয়—চরাঞ্চলের আলোকবালী, শ্রীনগর ও করিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের সড়কগুলোর একই দশা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ—নির্বাচনের মাঠে প্রার্থীরা সড়ক সংস্কারের আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পর আর এসব নিয়ে কাউকে কথা বলতে শোনা যায় না।

প্রশাসন বলছে—যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায়, সড়ক নির্মাণের সময় ভারী রোড-রোলারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে, রাস্তার কাজ ভালো হয়নি এবং এ কারণে রাস্তাগুলো ভেঙে যাচ্ছে।

৮ ফুটের রাস্তা নেমেছে ‘এক ফুটে’
কোথাও কোথা ব্যবহারের অনুপযোগী চরদিঘলদির রাস্তা। ছবি: স্টার

চরদিঘলদির বাসিন্দা প্রায় ২৪ হাজার। মেঘনা নদীবেষ্টিত এলাকাটি মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন ও শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নৌকা দিয়ে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয় এবং বর্ষাকালে গ্রামগুলো আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

আলোকবালীর নেকজানপুর থেকে বাখরনগর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তার অন্তত ১৭টি স্থান ধসে গেছে। এতে, চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি।

চরদিঘলদির ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় এক যুগ আগে রাস্তাটি নির্মাণ করা হলেও, মেরামত না করায় চরদিঘলদি গ্রাম থেকে জিতরামপুর গ্রাম পর্যন্ত সড়কের অন্তত ২৭টি স্থানে ভেঙে গেছে। আবার কোথাও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।'

এই রাস্তাটি লম্বালম্বিভাবে প্রায় সব গ্রামগুলোকে যুক্ত করেছে বলে জানান তিনি।

৮ ফুটের রাস্তা নেমেছে ‘এক ফুটে’
প্রার্থীরা সড়ক সংস্কারের আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পর এসব নিয়ে কাউকে কথা বলতে শোনা যায় না। ছবি: স্টার

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, 'প্রায় এক বছর আগে উপজেলা প্রকৌশল অফিস সড়ক পরিদর্শন করেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের মাধ্যমে এটি মেরামতের কথা ছিল। কিন্তু, এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।'

'আমরা আশাবাদী বিশ্বব্যাংকের অধীনে একটি প্রকল্প আছে, ওই প্রকল্পের অর্থ দিয়ে মেরামত করা হবে সড়ক। তবে, মেরামত না করে নতুন করে রাস্তা করলে এলাকাবাসীর বেশি উপকার হবে,' যোগ করেন তিনি।

চরদিঘলদি এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা সায়েদ আব্দুল্লাহ জিসু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় আট ফুট প্রস্থের রাস্তা দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে চলাচলও কঠিন। রাস্তার অধিকাংশ স্থানে নিচের মাটি সরে গিয়ে ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও প্রস্থ দুই ফুটের কম।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এলাকাটি ভৌগোলিকভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জ জেলার মাঝখানে। নিজ জেলার চেয়ে অন্য জেলায় চলাচল করা সহজ। আমাদের এলাকা থেকে পণ্য পরিবহনেও অনেক সমস্যা হচ্ছে।'

আলোকবালী ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শরীফ আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ইউনিয়নের গ্রামগুলো বিচ্ছিন্ন। কয়েকটি গ্রামে পাকা রাস্তা থাকলেও, রাস্তার বেহাল দশা। নির্বাচনের আগে এসে শুধুই আশ্বাস দিয়ে যান প্রার্থীরা। নির্বাচন চলে গেলে বিজয়ী হয়ে আমাদের কথা তারা ভুলে যান।'

আলোকবালী ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, আমাদের নিজস্ব বাজেটে যা কিছু করা সম্ভব তা করে রাস্তা ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।'

৮ ফুটের রাস্তা নেমেছে ‘এক ফুটে’
বর্ষাকালে গ্রামগুলো আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ছবি: স্টার

যোগাযোগ করা হলে নরসিংদী স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলী মো. শাহ আলম মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীপথে যোগাযোগের কারণে রোড রোলারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে ভালোভাবে রাস্তা মেরামত করা হয়নি। ফলে, ভালো আরসিসি হয়নি। গ্রামের রাস্তা সহজে ভেঙে যাবে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা।'

তিনি আরও বলেন, 'আট ফুট প্রস্থের রাস্তা নির্মাণের পক্ষে আমি নই। ওই এলাকাগুলোয় ১৮ ফুট প্রস্থের রাস্তা নির্মাণ করা উচিত।'

মো. শাহ আলম মিয়া জানান, স্বাভাবিকভাবে ছোটখাটো কাজের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প থেকে বরাদ্দের আবেদন করা হয় না। কিন্তু আলোকবালী, চরদিঘলদি ও নাগরিয়াকান্দি এলাকার শেখ হাসিনা সেতু এলাকা থেকে করিমপুর ও শ্রীনগর ইউনিয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

'প্রকল্পটি একনেকে পাশ হলে রাস্তা ঠিকঠাকসহ সমস্যা সমাধানে টেন্ডার ডাকা যাবে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB asks female employees not to wear short sleeves at work

The Bangladesh Bank has issued a dress code for its officials and employees, suggesting female workers refrain from wearing short-sleeved and short-length dresses, and leggings while on duty.

5h ago