বরিশালে মহাসড়ক থেকে ৬৯ গাছ কর্তন, সওজের দাবি ‘ভুয়া টেন্ডার’

কাটা গাছগুলো বরিশাল সওজের উপ-বিভাগীয় জোন অফিসে নিয়ে রাখা হয়েছে। ছবি: টিটু দাস/স্টার

উজিরপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশ থেকে ৬৯টি গাছ কাটা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের  দাবি, ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে গাছগুলো কাটা হয়েছে।

উজিরপুর উপজেলার বামরাইল-জয়শ্রী ইউনিয়নে মহাসড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে এসব গাছ কাটা হয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ আহমেদ সুমন দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কেটে ফেলা গাছগুলোর মধ্যে ৫৬টি কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করলেও, জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি। 

এ ঘটনায় ঢাকা থেকে সওজের বৃক্ষপালনবিদ কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ আহমেদ সুমন বলেন, 'গত কয়েকদিন ধরে সড়কের পাশের গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ পেয়েছি। ঢাকায় বৃক্ষপালন বিভাগে বিষয়টি জানালেও, তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।' 

তিনি জানান, বুধবার বিকেলে কাটা গাছগুলো সওজের উপ-বিভাগীয় জোন অফিসে নিয়ে রাখা হয়েছে।

'যারা গাছ কেটেছে, তাদের কাছ থেকে টেন্ডার ডকুমেন্ট নিয়ে ঢাকায় পাঠিয়েছি। ঢাকা থেকে বলেছে টেন্ডার ডকুমেন্ট ভুয়া,' বলেন এই কর্মকর্তা।

কেটে ফেলা গাছগুলোর বেশিরভাগ মেহেগনি ও শিশু।

স্থানীয়রা জানান, এর আগেও মহাসড়কের পাশ থেকে অসংখ্য গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বরিশাল সওজ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপবিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ প্রকৌশলী মো. আমানত আলীর সই করা কার্যাদেশ দেখিয়ে গাছ কাটা হয়েছে। 

বরিশালের গৌরনদী এলাকার এলাহী অ্যাগ্রো লিমিটেডকে গত ৩১ ডিসেম্বর দুই লটে গাছ কেটে নেওয়ার এ কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

কার্যাদেশ অনুযায়ী মহাসড়কের মাহিলারা-বাটাজোড়-জয়শ্রী অংশের অন্তত ৫ হাজার গাছ কেটে নেওয়ার কথা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, প্রকাশ্যে নিলামের ৩০ দিনের মধ্যে গাছ কাটার কথা। এছাড়া, টেন্ডারে শতকরা এক ভাগ জামানতও রাখার কথা। কিন্তু, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে ৩১ ডিসেম্বর সব টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী ডেইলি স্টারকে জানান, এসব টেন্ডার সাধারণত নির্বাহী প্রকৌশলী আহ্বান করেন। কিন্তু, এখানে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ডেকেছেন।

তিনি বলেন, 'বিষয়টি আমার সন্দেহজনক মনে হলে টেন্ডার ডকুমেন্ট দেখিয়ে বৃক্ষপালন বিভাগে ফোন দিলে তারা এটাকে ভুয়া বলে দাবি করেন।'

কার্যাদেশে স্থানীয় উজিরপুর থানা কর্তৃপক্ষ বরাবরও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর আহম্মেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না।'

জানতে চাইলে সওজের বৃক্ষপালন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মুকুট ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি আমাদের বিভাগ থেকে ইস্যুকৃত টেন্ডার নয়। এটি ভুয়া। এখানে টেন্ডারদাতা হিসেবে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আমানত আলীর নাম আছে। আমি পরিদর্শন শেষে তার পক্ষে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।'

'তবে এ কাজে অফিসের কেউ জড়িত কি না, আমার জানা নেই,' যোগ করেন তিনি।

এদিকে, টেন্ডার গ্রহীতা হিসেবে উল্লেখ করা এলাহী অ্যাগ্রো লিমিটেড গৌরনদী উপজেলার একটি চাল কলের প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী ফরহাদ মুন্সীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার প্রতিষ্ঠান কোনো টেন্ডারে অংশ নেয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

2h ago