প্রতারণার শিকার ১৫০ বাংলাদেশি কুয়ালালামপুরের ভবনে আটকা

প্রতীকী ছবি

গত চার মাস ধরে কুয়ালালামপুরের একটি পরিত্যক্ত তিনতলা ভবনে আরও ১৪৯ বাংলাদেশির সঙ্গে আটকে আছেন রফিকুল ইসলামও (ছদ্মনাম)।

'দয়া করে আমাদের বাঁচান। আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। কেউ আমাদের বাঁচাতে না পারলে এখানেই আত্মহত্যা করে মরতে হবে', টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন রফিকুল।

উন্নত জীবনের আশায় লাখো টাকা খরচ করে তারা পাড়ি জমিয়েছেন মালয়েশিয়ায়। তাদের কেউ কেউ চড়া সুদে ঋণ নিয়ে, আবার কেউ জমি বিক্রি করে দালালদের অর্থ পরিশোধ করেছেন। দালালরা তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, মালয়েশিয়ায় তাদের নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ দেওয়া হবে, যেখানে বেতন মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।

যে নির্মাণ সংস্থার এজেন্টরা তাদের নিয়োগ করেছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল, কুয়ালালামপুরে যাওয়ার পরপরই তারা এই বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়।

'পানি কেনা ছাড়া আমরা বাইরে যেতে পারি না। আমাদের কাছে পান করার মতো পানিও নেই। প্রতিদিন গোসলের জন্য পানির জোগাড় করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। দালালরা আমাদের রান্নার জন্য চাল, আলু ও ডাল সরবরাহ করে। এভাবে কতদিন বেঁচে থাকা যায়?'

রফিকের মতো আরেক ভুক্তভোগী মেহেরপুরের গোবিপুর গ্রামের শিহাব উদ্দিন (ছদ্মনাম)। নিজের কৃষি জমি বিক্রি করে দালালকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া যান তিনি।

'আমার পরিবার আমাকে এখানে পাঠিয়েছে এই আশায় যে, আমি পরিবার চালাতে আরও ভালোভাবে সাহায্য করতে পারব। কিন্তু এখন কী হবে জানি না। এখানে কোনো কাজ পাব কি না, তাও জানি না।'

এই অবস্থায় চাকরি পেতে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করেছেন শিহাব। অন্যথায় ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, একজন শ্রমিক কেবল ৭৮ হাজার টাকা খরচ করেই মালয়েশিয়া যেতে পারবেন। তবে তাদের অধিকাংশই সেখানে যাওয়ার জন্য সাড়ে তিন লাখ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। অথচ এখনো কোনো কাজ পাননি তারা।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই গত ২২ ফেব্রুয়ারি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ৫০ জনকে বিনা খরচে কল ভিসায় মালয়েশিয়ায় নেওয়া হয়, যা মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের সংকট আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ব্র্যাক ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, 'মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিক পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটিই ত্রুটিপূর্ণ। বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দুই দেশেই একটি বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে, যাদের কারণে বছরের পর বছর ধরে হাজারো অভিবাসী শ্রমিক প্রতারণা ও ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছেন।'

তিনি এর পেছনে জড়িতদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে একটি স্বাধীন নিয়োগ কমিশন গঠনের পাশাপাশি সব শ্রমিককে তাদের দক্ষতা অনুযায়ী চাকরি নিশ্চিত করতে কম খরচে প্রক্রিয়াটি সহজ করার পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, 'মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ থেকে কিছু লোক এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। মালয়েশিয়ার সরকার এখন চাকরি দিতে ব্যর্থ নিয়োগকারীদের জরিমানা করছে। আমরা আশা করি এই শ্রমিকরা শিগগিরই কর্মসংস্থান খুঁজে পাবে।'

তিনি এ সমস্যা নিরসনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং মালয়েশিয়ান দূতাবাসকে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করছে। দূতাবাসের শ্রম উইং সক্রিয়ভাবে শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সমাধান করছে।

তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন এবং তাদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
government

Govt to act with people’s backing if blocked from responsibilities: advisory council

"The Advisory Council believes that a broader unity is essential to maintain national stability"

34m ago