খুলনায় লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ, ক্ষতির মুখে রপ্তানিমুখী মৎস্য খাত

ছবি: স্টার

খুলনা নগরীর একটি তিন তলা বাড়ির নিচ তলায় স্ত্রী আর ছয় বছরের মেয়েকে নিয়ে থাকেন তুষার কান্তি দাস।

তিনি একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফিরে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছেন গত এক সপ্তাহ ধরে। এর মধ্যে মশার কারণে দরজা জানালা প্রায় সময়েই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং আর ভ্যাপসা গরমে ঘরে থাকাটাই হয়ে উঠছে দুর্বিষহ।

তুষার জানান, গত শুক্রবার সারাদিনই বিদ্যুতের যাওয়া আসা ছিল, রাতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ছিল না বিদ্যুৎ।

`আমি রাত ১১টার দিকে বাসায় ফিরে প্রায়ই দেখি বিদ্যুৎ নাই। আমার ছোট মেয়েটা দেখি ঘেমে একাকার। তারপর ওকে নিয়ে বাসার ছাদে যাই। সন্ধ্যার সময় জানালা খোলা থাকলে প্রচুর মশা ঢোকে তাই জানালা বন্ধ করতে বলি। একটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের ভেতর আছি। আইপিএস কেনার মতো সামর্থ্য নাই, কোনোমতে চার্জার ফ্যান কিনে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।'

খুলনা শহরে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)।

ওজোপাডিকো সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৯৬ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে ১৬০ মেগাওয়াট। বাকি ৩৬ মেগাওয়াটের লোডশেডিং ছিল শহরে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওজোপাডিকোর তিন প্রধান প্রকৌশলীর একজন জানান, খুলনা শহরের জন্য দিনের বেলা প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা শহরে, ৩৭টি পৌরসভায়, দুই সিটি করপোরেশনে এবং ২১টি উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব ওজোপাডিকোর। খুলনা শহরের মতো অন্যান্য জেলায়ও ধারাবাহিকভাবে লোডশেডিং হচ্ছে।

ওজোপাডিকোর গত বুধবার চাহিদা ছিল ৬৮০ মেগাওয়াট, আর বৃহস্পতিবার এই চাহিদা দাঁড়ায় ৬৭৫ মেগাওয়াটে। যদিও কর্তৃপক্ষ এই চাহিদার বিপরীতের সরবরাহ কত ছিল তা জানাতে রাজি হননি।

ক্ষতিতে রপ্তানিমুখী মৎস্যখাত

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হোগলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা গৌতম মন্ডল। বাড়ির পাশে দেড় বিঘা জমিতে সেমি ইন্টেনসিভ চিংড়ি ফার্ম করেছেন।

প্রত্যেকদিন এক ঘণ্টা পরপর অ্যারো মেশিনের সাহায্যে চিংড়ি মাছে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। এজন্য দরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। কিন্তু গত এক সপ্তাহ যাবত ভীষণ রকমের সংকটে আছেন তিনি। বাড়িতে কোনোভাবে পাখা বা অন্য উপায়ে বিদ্যুতের অভাব পূরণ করতে পারলেও চিংড়ি মাছের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি।

'আমার চিংড়ি ঘেরে ৪০ হাজারের মতো রেণু পোনা দেওয়া আছে। তীব্র গরমে এখানে প্রতি ঘণ্টায় অ্যারোমেশিন চালানো লাগে, তা না হলে মাছ মরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গত এক সপ্তাহে যেভাবে বিদ্যুৎ যাচ্ছে তাতে লোন করে হলেও এখন জেনারেটর কেনা দরকার হবে। সন্ধ্যার পর প্রায় নিয়ম করে এক ঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ যায়। গতকাল প্রায় ছয় ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ ছিল না।'

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) পরিচালক এস. হুমায়ুন কবীর জানান, পচনশীল পণ্য হওয়ায় চিংড়িকে সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এ ছাড়া চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতি ধাপে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।

তিনি বলেন, 'চিংড়ি ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখতে সারাক্ষণ বিদ্যুৎচালিত অ্যারেটর (বায়ুবাহক) ব্যবহার করতে হয়। লোডশেডিং হলে চিংড়ির উৎপাদন কমে যায়, কখনো কখনো সব মাছই মারা যায়। আর এখন চিংড়ি চাষের ভরা মৌসুম চলছে। তাই বিদ্যুতের অভাব চিংড়ি চাষের সঙ্গে যারা জড়িত তারা তীব্রভাবে অনুভব করছেন।'

হুমায়ুন কবীর বলেন, 'একটি কারখানায় বরফ জমাতে একটানা ১৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দরকার হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটর ব্যবহার করে বরফ তৈরি করতে হচ্ছে। ফলে বরফের দাম অনেক বেড়ে গেছে।'

বাংলাদেশে মোট ১০৫টি হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত করা হয় খুলনার বিভিন্ন কারখানায়।

Comments

The Daily Star  | English

Nepali police fire tear gas and rubber bullets at protesters outside parliament

Authorities imposed a curfew around the parliament building after thousands of the protesters tried to enter the legislature by breaking a police barricade.

40m ago