‘সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ’ কারা জানে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

কোটা আন্দোলন
কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবিতে গত ৭ জুলাই শাহবাগে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। ছবি: পলাশ খান/স্টার

'যৌক্তিক আন্দোলনের দাবির মুখে ২৩ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আংশিক বিজয় অর্জিত হয়েছে' উল্লেখ করে সারা দেশে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ একাধিক দাবি জানিয়েছে 'সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ' নামে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম।

তবে এই প্ল্যাটফর্ম বিষয়ে কিছু জানেন না ও তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক বা সম্পৃক্ততা নেই বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক।

'সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ' প্ল্যাটফর্মটির সমন্বয়ক হিসেবে এলিয়ান কাফী প্রতীক নামে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে। তিনিসহ ৯১ জন সাধারণ শিক্ষার্থীর সই করা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

এ বিবৃতি বিষয়ে জানতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সংবাদদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ ধরনের কোনো বিবৃতি তারা পাননি বলে জানান।

ওই বিবৃতির একটি কপি সংগ্রহ করেছে দ্য ডেইলি স্টার।

এতে বলা হয়েছে, 'সাধারণ ছাত্ররা জ্বালাও, পোড়াও, সহিংসতা এবং ধ্বংসাত্বক কাজের সাথে জড়িত নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এটা সমর্থন করে না। যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে তাদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।'

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বিবৃতিতে সই করা ঢাবি শিক্ষার্থী এলিয়ান কাফী প্রতীকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। প্রশ্ন পাঠিয়ে এসএমএস করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এদিকে এই 'সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ' কারা—তা জানে না কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এলিয়ান কাফী নামে কাউকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাবি শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে আমরা কিছু জানিনা। এখানে যে ঢাবি শিক্ষার্থীর নাম আছে তাকেও আমি চিনি না।'

'সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ' যে বিবৃতি দিয়েছে সে বিষয়ে উমামা ফাতেমা বলেন, 'সরকার আমাদের দাবি পূরণ করেনি। হাইকোর্ট ও পরিপত্র দেখিয়ে বলা হচ্ছে দাবি আদায় হয়ে গেছে। এটা সত্য না। আমাদের দাবি ছিল অযৌক্তিক কোটা বাদ দিয়ে অনগ্রসরদের জন্য কোটা রেখে যৌক্তিক সংস্করণ করে সংসদে আইন পাশ হবে। সরকার সংসদে আইন পাশের বিষয়ে কিছু বলছে না। শুধু পরিপত্র জারি করেছে। পরিপত্র জারির আগে যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সঙ্গে কি আলোচনা হয়েছে? এরকম কিছু তো হয়নি।

দাবির বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'ভবিষ্যতে যদি এই পরিপত্রের বিরুদ্ধে রিট করা হয় যে এখানে নারী কোটা কেন ১০ শতাংশ নেই, তখন যদি সরকার সেটার পরিপ্রেক্ষিতে আবার এই পরিপত্র বাতিল করে দেয় তাহলে কি আমি আবার কোটা সংস্কার আন্দোলন করব? এটার একটা সহজ সুরাহার জন্য আমরা আইন পাশের দাবি জানিয়েছিলাম। যত স্টেকহোল্ডার আছে আন্দোলনকারী থেকে শুরু করে নারী, মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী যত ধরনের স্টেকহোল্ডার আছে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে সরকার একটা কোটা নির্ধারণ করবে। সেটার ভিত্তিতে আইন পাশ করবে। আইনটা দেখভাল ও কোটা পুর্নবিন্যাস নির্ধারণ করার জন্য একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। এটা আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।'

আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষার্থীদের আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে জানিয়ে উমামা বলেন, 'আমাদের তিন সমন্বয়ককে ডিবি গতকাল নিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চলছে। কীসের ওপর ভিত্তি করে আন্দোলন প্রত্যাহার করব? সরকার কি আমাদের বসার ন্যূনতম পরিবেশ দিচ্ছে? এটা তো শুধু সমন্বয়ক আর সহ সমন্বয়কের আন্দোলন না। এটা আপামর ছাত্রদের আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা যে একটা সিদ্ধান্ত জানাবে সেটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হতে হবে। সম্মিলিত সিদ্ধান্ত তখনই আসবে যখন শিক্ষার্থীরা পরষ্পরের সাথে কথা বলতে পারবে। ছাত্ররা তো একত্রিত হওয়ারই সুযোগ পাচ্ছে না। আমরা বলেছি হল খুলে দিতে। হল খুলে দিলে আমরা আলোচনা করে আন্দোলন বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারব।'

তিনি আরও বলেন, '১৫ জুলাইয়ের আগে অর্থাৎ ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করার আগে শুধু আইন পাশের দাবি নিয়ে আমরা আলোচনায় বসতে পারতাম। কিন্তু যখন আবু সাঈদকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলল, এরপরে পাখির মতো গুলি করে মানুষকে মারা হলো এরপরে কিসের ওপর ভিত্তি করে আন্দোলন প্রত্যাহার হবে?'

Comments

The Daily Star  | English

25 children among 27 killed in Milestone jet crash

Twenty bodies have so far been handed over to their respective families

1h ago