নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন পোলট্রি ব্যবসায়ী, প্রতারণার অভিযোগ

সেন্টু মিয়া পেশায় হাঁস-মুরগির ব্যবসায়ী। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা সেন্টু নিজের পরিচয় দেন সাংবাদিক হিসেবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা সেন্টুর বিরুদ্ধে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।

সেন্টুর বিরুদ্ধে সম্প্রতি ছালেক আহমেদ তারেক নামের এক ব্যক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তিনি সেন্টু মিয়ার বিচার দাবি করেছেন।

লিখিত অভিযোগপত্র ও এর সঙ্গে জমা দেওয়া বিভিন্ন নথি থেকে জানা যায়, সেন্টু মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের ঘাটুরা গৌতমপাড়া এলাকায়। তিনি ওই গ্রামের মো. জিল্লু মিয়া ও মোসাম্মৎ হেনা বেগমের সন্তান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দ বাজারে 'মেসার্স শেখ এন্টারপ্রাইজ' নামে একটি হাঁস-মুরগির দোকান পরিচালনা করেন তিনি।

পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা ৪২ বছর বয়সী এই ব্যক্তি মূলত হাঁস-মুরগির ব্যবসায়ী হলেও নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রকাশিত 'তিতাস বার্তা' পত্রিকার পরিচয়পত্র রয়েছে তার কাছে। এই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। সম্প্রতি নবগঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা প্রেসক্লাবের প্রস্তাবিত কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও আছেন তিনি।

হাঁস-মুরগির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি নিজেকে মৎস্যজীবী পরিচয় দিয়ে গত ২০১৯ সালে স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয় থেকে 'তিতাস আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি' নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় তিনি এই ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে অবৈধভাবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। গত ছয় বছর ধরে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

তাছাড়া সেন্টু মিয়া রাজনীতির ময়দানেও সক্রিয় ছিলেন। অতীতে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুরোনো পরিচয় আড়াল করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা প্রেসক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।

এর পর থেকেই চাঁদাবাজি এবং প্রতারণা করতে সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করতেন তিনি।

অভিযোগকারী ছালেক আহমেদ তারেক বলেন, 'প্রবাসীর স্ত্রীদেরকে ফাঁদে ফেলাসহ বহুমুখী প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এই সেন্টু। সে সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা করে যাচ্ছে। আমার এলাকার সাধারণ মানুষরা তার দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন। এজন্য আমি স্বপ্রণোদিত হয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি।'

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. সেন্টু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ তো কেউ দিতেই পারে। তবে আমি তিতাস বার্তা পত্রিকায় বার্তা সম্পাদক হিসেবে আছি। আমার সম্পাদক মহোদয় সদর উপজেলা প্রেসক্লাব করতেছে। উনার অধীনে যেহেতু আছি, তাই আমাকে এই ক্লাবে থাকতে হবে।

অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা অভিযোগ দিয়েছে তারাই ভালো বলতে পারবে। এ কথা বলার পরপরই তিনি ইফতারের পরে কথা বলবেন বলে কল কেটে দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূঁইয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি তিন/চার কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে তিতাস বার্তা পত্রিকার সম্পাদক এম এ মতিন সানুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'সেন্টু আমার পত্রিকার স্টাফ। তার ব্যাপারে আমি এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে আমার পত্রিকায় অপসংবাদিকতার কোনো জায়গা নেই৷ কেউ আমাদের পত্রিকার নাম ভাঙ্গিয়ে অপসংবাদিকতা করছে এমন প্রমাণ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। তিতাস বার্তার একটা সুনাম আছে, আমরা এই ধরণের অপকর্মকে বরদাশত করি না৷'

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

8h ago