রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধের ফাঁদে: মিসাইল হামলায় প্রাণ গেল বাংলাদেশি তরুণের

মোহাম্মদ আকরাম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

ভাগ্য বদলের আশায় রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার এক তরুণ। স্বপ্ন ছিল ওয়েল্ডার হিসেবে কাজ করে পরিবারকে সচ্ছলতা এনে দেওয়ার। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে জীবনটা থেমে গেছে ইউক্রেনের মাটিতে। অল্প কয়েকদিনের সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঠানো হয় রণক্ষেত্রে। শেষমেশ প্রাণ গেল মিসাইল হামলায়।

নিহত তরুণের নাম মোহাম্মদ আকরাম হোসেন (২৫)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের দিনমজুর মোর্শেদ মিয়ার ছেলে।

গতকাল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) আকরামের এক সহযোদ্ধা মোবাইলে ফোন করে তার মৃত্যুর খবর জানালে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।

আকরামের বাবা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, একমাত্র উপার্জনকারী হিসেবে দিনমজুরি করে সাত সদস্যের সংসারটি কোনোরকমে চালাচ্ছিলেন তিনি। এ অবস্থায় ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে প্রায় নয় মাস আগে আকরামকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়। ওয়েল্ডিংয়ের কারখানায় কাজ দেওয়ার কথা বলে রাশিয়ায় নিয়ে যায় দালাল। বিনিময়ে নেওয়া হয় নয় লাখ টাকা। সেখানে যাওয়ার পর প্রথমে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানে ছয় মাস কাজ করেন আকরাম। বেতন খুব বেশি না পেলেও তার উপার্জনে পরিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে।

কিন্তু আড়াই মাস আগে দালালরা তাকে রুশ সেনাবাহিনীতে 'চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা' হিসেবে নিযুক্ত করে। মাত্র ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে পাঠানো হয় ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে। সেখানেই গত ১৪ এপ্রিল মিসাইল হামলায় প্রাণ হারান তিনি।

পরে ময়মনসিংহের বাসিন্দা আকরামের সহযোদ্ধা তার পরিবারকে ফোন করে মৃত্যু সংবাদটি জানান। এরপর পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। ছেলের মৃত্যুশোকে ভেঙে পড়েছেন মা মোবিনা বেগম। ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন বারবার। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আকরাম ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান, সংসারের ভরসা। তার মৃত্যুতে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে এই অসহায় পরিবারটির।

এদিকে, নিহতের মরদেহ দেশে আনতে ও ক্ষতিপূরণ পেতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে পরিবার।

কান্নারত অবস্থায় মোবিনা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত রোববার সর্বশেষ আকরামের সঙ্গে মোবাইলে আমাদের কথা হয়। এক পর্যায়ে সে ডিউটি থেকে আসার কথা জানিয়ে ঘুম থেকে উঠে পরে কথা বলবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু আর কথা বলতে পারেনি আমার ছেলে। কে জানতো এটাই ছেলের সঙ্গে আমাদের শেষ কথা।'

এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আশুগঞ্জের তরুণের মৃত্যুর কথা জেনেছি। বিষয়টি পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। মরদেহ কোথায় এবং কাদের হেফাজতে আছে এসব তথ্যসহ প্রবাস-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে৷'

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

3h ago