খসড়া অধ্যাদেশের প্রস্তাব

ঋণ পাবেন জুলাই অভ্যুত্থানের আহতরা, শহীদদের পরিবারও

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহতরা কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ, আবাসন সুবিধা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাবেন।

তবে কেউ মিথ্যা পরিচয়ে আর্থিক সুবিধা নিলে দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করার পাশাপাশি গৃহীত অর্থের দ্বিগুণ ফেরত দিতে হবে।

শাস্তির বিধান রেখে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণ ও পুর্নবাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব করেছিল। গত বৃহস্পতিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের ২৮তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

জুলাই শহীদ পরিবারের জন্য নির্ধারিত আর্থিক সুবিধা পরিবর্তনের সুযোগও রাখা হচ্ছে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, 'শহীদ ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বয়স, তার ওপর পরিবারের নির্ভরশীলতা পর্যালোচনা করে এককালীন বা মাসিক আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি করা যাবে।'

'জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা এর রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠনের সদস্যদের আক্রমণে শহীদ হয়েছেন এমন পরিবার' আর্থিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন।

অধ্যাদেশে আহতদের তিন শ্রেণিতে অভিহিত করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ এবং আহত ব্যক্তিরা যথাক্রমে 'জুলাই শহীদ' এবং 'জুলাই যোদ্ধা' বলে খসড়া অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

'ক' শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহতদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, 'নূন্যতম এক চোখ/হাত/পা ক্ষতিগ্রস্ত ও স্বাধীনভাবে জীবন যাপনের অনুপযোগী, সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন, সম্পূর্ণভাবে মানসিক বিকারগ্রস্ত এবং কাজ করতে অক্ষম বা অনুরূপ আহত ব্যক্তি'।

'খ' শ্রেণির মধ্যে থাকবেন 'আংশিক দৃষ্টিহীন, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বা অনুরূপ আহত ব্যক্তি'।

'গ' শ্রেণির মধ্যে থাকবেন 'যারা দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হচ্ছে, চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিক কাজ-কর্ম করতে সক্ষম হবেন এবং যারা এরই মধ্যে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন এবং স্বাভাবিক কাজ-কর্ম করতে সক্ষম'।

যা যা পাবেন: আহত জুলাই যোদ্ধাদের জন্য দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং সরকার নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার।

চিকিৎসা সেবা পেতে কোনো ধরনের আবেদন করতে হবে না, তবে সরকার থেকে ইস্যুকৃত হেলথ কার্ড দেখাতে হবে।

গুরুতর আহত ব্যক্তিদের দেশে-বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।

অধিদপ্তর গঠন: অধ্যাদেশের অধীনে ঢাকায় 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর' গঠন করা হবে, যা জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে বহুমুখী উদ্যোগ নেবে। প্রয়োজনে ঢাকার বাইরেও অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের সুযোগ রাখা হবে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হবেন অতিরিক্ত সচিব।

অধিদপ্তরের মূল কাজ হবে—জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণে সরকার নির্ধারিত এককালীন ও মাসিক আর্থিক সুবিধা দেওয়া, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। আহত ও শহীদদের তালিকা প্রণয়ন, গেজেট প্রকাশসহ ডাটাবেজে সংরক্ষণ। এছাড়া শহীদ ও আহতদের পরিবারের কল্যাণে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করবে জুলাই অধিদপ্তর।

এর বাইরে অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে গবেষণা, শহীদদের কবর সংরক্ষণ ও স্মৃতি ফলক স্থাপনসহ এ সংক্রান্ত ইতিহাস বিদেশে প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারবে জুলাই অধিদপ্তর।

দণ্ড: প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়ায় জুলাই অভ্যুত্থানের নামে কেউ যদি প্রতারণার মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা নেয় সে ক্ষেত্রে দুই বছরের শাস্তিরও ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

এতে বলা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত বা শহীদ পরিবারের সদস্য না হয়েও যদি কেউ আলোচ্য অধ্যাদেশের অধীনে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে বা দাবি করে, তাহলে সেটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। সেই সঙ্গে গৃহীত আর্থিক সুবিধার দ্বিগুণ আদায় করবে সরকার।

বিলুপ্তি: অধ্যাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য পৃথক একটি বিধিমালা প্রণয়ন করবে সরকার। অধ্যাদেশের অধীনে জুলাই অধিদপ্তর গঠিত হওয়ার পর গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে এই সেলের অধীনে সংগঠিত কার্যক্রম নতুন গঠিত অধিদপ্তরের অধীনে সংগঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে।

Comments

The Daily Star  | English

BNP to finalise 200 candidates by this month

Around 100 remained "problematic" due to internal rivalries and multiple nomination seekers

9h ago