টাঙ্গাইল মহাসড়ক

‘কখন সেতু পার হব, কখন বাড়ি পৌঁছাব!’

বাসের টিকিট না পেয়ে অনেকে খালি গরুর ট্রাকে গ্রামে ফিরছেন। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

রাজধানীর একটি কারখানায় কাজ করেন মাসুদ রানা। পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে পাবনায় গ্রামের বাড়িতে ফিরছেন। বাসের টিকিট না পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত দশটায় খালি গরুর ট্রাকে ওঠেন।

মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে আজ শুক্রবার সকাল নয়টায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত পৌঁছায় সে ট্রাক।

মাসুদ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পথে সব জায়গায় যানজট ছিল। কী করব? বাড়ি তো যেতে হবে। এখনো সেতু পার হতে পারলাম না!'

আরেক যাত্রী মাহবুবুর রহমান জানান, ভোর সাড়ে তিনটায় বাইপাইল থেকে রওনা হন। পথে বিভিন্ন স্থানে আটকে থাকার পর সকাল সাড়ে আটটায় টাঙ্গাইল শহর বাইপাসে এসে আবার যানজটে আটকে যায় তাদের গাড়ি। দুই ঘণ্টা পর কেবল এলেঙ্গা পর্যন্ত এসেছেন তিনি।

'কখন সেতু পার হব, কখন বাড়ি পৌঁছাব—বুঝতে পারছি না,' বলেন সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া মাহবুবুর রহমান নামের আরেক যাত্রী। 

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের খবর আগে থেকেই জানতেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শাহাদত খান। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি রওনা হন ভোর রাত তিনটায়। কিন্তু তবুও যানজটের হাত থেকে রক্ষা পাননি। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল আসতে যেখানে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লাগার কথা, সেখানে তাদের লেগেছে সাত ঘণ্টা।

ঢাকা থেকে আসতে আমিনবাজার, সাভার, বাইপাইল, চন্দ্রা, গোরাই, মির্জাপুর, পাকুল্লা, করটিয়াতে যানজটে কয়েক ঘণ্টা আটকে ছিল তাদের প্রাইভেটকার।

শাহাদত বলেন, 'আমার আমেরিকাফেরত মেয়ে ও তার দেড় বছরের ছেলে পথে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।'

বগুড়াগামী বাসের চালক মোহাম্মদ আলী জানান, এবার ঈদে যানজট হতে পারে এ আশঙ্কা তাদের মনেও ছিল। কিন্তু এতটা খারাপ অবস্থা হবে ভাবতে পারেননি।

'আমাদের পরিবহন শ্রমিকদের অভ্যাস আছে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থেকে বাসের বৃদ্ধ, নারী ও শিশু যাত্রীরা খুবই কষ্ট পাচ্ছেন,' বলেন তিনি।

দুপুরেও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পৌলী এলাকায় উত্তরমুখী যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। অপর প্রান্তের ঢাকামুখী লেন প্রায় ফাঁকা।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত) রেকর্ড ৬৪ হাজার ২৮৩টি যানবাহন যমুনা সেতু পার করেছে। সেতুর উপর যানজট এড়াতে এবং ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের দুর্ভোগ কমাতে শুক্রবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিট থেকে ঢাকামুখী যানবাহন আটকে রেখে সেতুর উভয় লেন দিয়ে শুধু উত্তরমুখী যান চলতে দেওয়া হয়।

রাস্তায় দায়িত্ব পালনকারী জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্য জানান, এবার মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। ঈদের আগে ছুটিও দেওয়া হয়েছে কম। তাই দুদিনে সব মানুষ বাড়ি ফিরতে রাস্তায় নেমেছে। কখনো রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হচ্ছে, ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে যানবাহনের সারি আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মো. শরীফ বলেন, 'সারা পথ চার লেনে এসে যমুনা সেতুতে দুই লেন দিয়ে সব গাড়ি পার হয়। সেতুতে গাড়ি টানতে না পারলে এদিকে দীর্ঘ যানজট হয়। এরপরও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।' 

জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে জেলা পুলিশের সদস্যরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

BB keeps policy rate unchanged 

BB said the 10 percent policy rate would remain in place for the July-December period

36m ago