রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা করলে নির্বাচনে সমস্যা হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা করলে কোনো সমস্যা ছাড়াই আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'যারা ইলেকশন করবেন, অর্থাৎ রাজনৈতিক দল বা স্বতন্ত্র হিসেবে যারা করতে চান, তারা কিন্তু মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তারা যদি সবাই সহযোগিতা করে, তাহলে আমাদের পক্ষে ইলেকশন করা সম্ভব, কোনো সমস্যা হবে না।'
আজ শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনস পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
গণঅভ্যুত্থানের পর লুট হওয়া সরকারি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সব অস্ত্র এখনো আমরা উদ্ধার করতে পারি নাই। অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা আমরা করছি। আল্লায় দিলে হয়তো নির্বাচনের আগে আরও অনেক অস্ত্র উদ্ধার হয়ে যাবে।
'নির্বাচনটা যেন আপনাদের সহযোগিতায়, জনগণের সহযোগিতায় ভালোভাবে হতে পারে, সেই চেষ্টা অবশ্যই আমরা করব। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটা অংশ, কিন্তু সবচেয়ে বড় অংশ হলো যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। দুই নম্বর হলো—ইলেকশন কমিশন, তারপর প্রশাসন, তারপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।'
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর 'লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব নাই' বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে আদমজীতে র্যাব-১১ এর সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেখানে তাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে 'পুশ ইন' প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়।
জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'যারা বাংলাদেশি নাগরিক ওইখানে আছেন, তাদেরকে আমাদের নিতে হবে, ১০ বছর বা ২০ বছর হোক; যদি ওইখানে গিয়ে থাকেন এবং বাংলাদেশি হয়ে থাকেন। কিন্তু যারা রোহিঙ্গা তাদেরকে অ্যাকসেপ্ট করছি না, ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছি।'
ভারত 'প্রপার চ্যানেলে' বাংলাদেশিদের পাঠাচ্ছে না উল্লেখ করে এ উপদেষ্টা বলেন, 'তারপরও যদি বাংলাদেশি কোনো নাগরিক সেখানে থাকে, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী প্রপার চ্যানেলে পাঠানোর কথা বলেছি। ওদেরও যারা ভারত থেকে আসতেছে, তাদের কিন্তু আমরা প্রপার চ্যানেলে পাঠাই। কিন্তু ওরা প্রপার চ্যানেলে না পাঠিয়ে জঙ্গলে, নদীর পাড়ে ফেলে রাখে। এটা কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য না। এটা হিউম্যান রাইটসেরও ভায়োলেশন। এ ব্যাপারে আমরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। প্রতিবাদে কিছু কিছু কাজ হচ্ছে, এখন সংখ্যাটা একটু কমে আসছে।'
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ লাইনসে এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'এক্ষেত্রে যেটা ঘটনা, সেই সত্য সংবাদটি প্রকাশ করবেন। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের নির্দেশনা—যেই ঘটনা ঘটে ওইটার সত্যিটা প্রকাশ করে দেওয়া, এইটার ভেতর লুকোচুরি করার কোনো কিছু নাই। জনগণ কিন্তু সচেতন। তারপরও কিছু স্বার্থান্বেষী লোকজন তো থাকবেই যারা সবসময় একটা প্রবলেম ক্রিয়েট করার জন্য চেষ্টা করবে।'
'রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের কোনো বিভেদ থাকার কথা না' উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, 'যেসব রাজনৈতিক দল পুলিশের সঙ্গে বা অন্যদের সঙ্গে একটা বিভেদ করার চেষ্টা করছে, তাদের অনুরোধ করব, বিভেদ আপনারা নিজেদের ভেতরে করবেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে তো রাজনৈতিক দলের কোনো বিভেদ থাকার কথা না। আমাদের কাজ হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। আর আপনাদের (রাজনীতিবিদ) কাজ, জনগণের কাছে গিয়ে ভোট আদায় করা। আপনারা সেই চেষ্টা করবেন। জনগণ যাতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অবনতি না হয়, সেইটা দেখার দায়িত্ব আমাদের।'
গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় করা মামলাগুলোর অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলাগুলোর অগ্রগতি...অলরেডি কয়েকটা মামলা কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। আরেকটা বিষয় ছিল যে, একটা হত্যা মামলায় হয়তো ২০ জন আসামি হওয়ার দরকার ছিল, ওইখানে ২০০ আসামি দিয়ে দিছে। এতে তদন্তে তো বেশি সময় লাগছে। নিরপরাধ ব্যক্তি যেন কোনো অবস্থায়ই শাস্তির আওতায় না আসে, এজন্য আমাদের কিন্তু ভালোভাবে দেখতে হয়।
'অনেকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিছু নিরীহ লোকের নাম দিয়ে দিছে। এজন্য কিন্তু সময় বেশি লাগছে। যদি তারা অ্যাকচুয়াল আসামির নাম দিতো, তাহলে এত সময় লাগতো না', যোগ করেন তিনি।
এই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন র্যাবের মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার প্রমুখ।
Comments