নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুলকে শেষ বিদায় জানাল নিউইয়র্ক

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিউইয়র্ক পুলিশের (এনওয়াইপিডি) নিহত কর্মকর্তা দিদারুলকে শেষ বিদায় জানালেন ব্রঙ্কসে জড়ো হওয়া হাজারো মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে পূর্ণ মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার জামে মসজিদের বাইরে তাকে শেষ বিদায় জানান শোকাহত নিউইয়র্কবাসী।
মিডটাউন ম্যানহাটনের একটি ভবনে গত সপ্তাহে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন দিদারুল ইসলাম।
জানাজার নামাজের আগে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ তাকে প্রথম শ্রেণির গোয়েন্দা হিসেবে মরণোত্তর পদোন্নতির ঘোষণা দেয়।
এনওয়াইপিডির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে বলা হয়, 'তিনি এই শহরকে রক্ষা করার জন্য সবকিছু দিয়েছেন। দিদারুল ইসলামকে মরণোত্তর পদোন্নতি দিয়ে সম্মানিত করেছেন পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ...আমরা কখনোই ভুলব না। ডিটেকটিভ ইসলামের স্মৃতি এনওয়াইপিডির প্রতিটি অফিসারের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।'
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও তীব্র তাপদাহের মধ্যেই দিদারুলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ৫৪টির বেশি প্রিসিনকট ও পাশের অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তারা, বিভিন্ন কমিউনিটির সদস্য, স্থানীয় নেতা ও নগর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদের আশেপাশের রাস্তা ছিল শুনশান নীরব, ইউনিফর্মধারী কর্মকর্তা, বাংলাদেশি অভিবাসী ও শোকাহত স্থানীয়রা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান দিদারুলকে। জানাজার নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বৃষ্টি।
জানাজা শেষে পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, 'দিদারুল ইসলাম এই দেশে একজন অভিবাসী হিসেবে এসেছিলেন। তার জীবনের কোনো গ্যারান্টি ছিল না। শুধু আশা ছিল যে কঠোর পরিশ্রম, বিনয় দিয়ে জীবনকে অর্থপূর্ণ কোথাও নিয়ে যাওয়া এবং তা শেষ পর্যন্ত হয়েছে।'
দিদারুল নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে মাত্র সাড়ে ৩ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি স্কুল নিরাপত্তা এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন।
দিদারুল স্ত্রী জামিলা আক্তার, পাঁচ ও সাত বছর বয়সী দুই ছেলে এবং তার বাবা-মাকে নিয়ে ব্রঙ্কসের একটি সাধারণ বাড়িতে থাকতেন। অনাগত তৃতীয় সন্তান আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পৃথিবীর আলো দেখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শোকাহত পরিবারের পাশে বসে থাকা মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং স্টেট অ্যাসেম্বলি সদস্য জোহরান মামদানিসহ শহর ও অঙ্গরাজ্যের নেতারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদের ভেতরে দিদারুলের কফিনটি নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সবুজ, সাদা ও নীল পতাকা দিয়ে মোড়ানো ছিল। সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় এবং একটি বিশাল মার্কিন পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয় তার মরদেহ।
নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানায়, ওই কক্ষে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রার্থনা হচ্ছিল। ইউনিফর্মধারী ও সাদা পোশাকের কর্মকর্তারা শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই কাঁদছিলেন।
ছয়জন অফিসার মসজিদ থেকে কফিনটি বের করে একটি অপেক্ষারত সাদা গাড়িতে তোলেন।
বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেলে করে সারিবদ্ধভাবে কফিনের পাশে যেতে থাকেন। শোকযাত্রাটি নিউজার্সির দিকে যাচ্ছিল দিদারুলের মরদেহ দাফনের জন্য। তারা যখন ৬ নম্বর ট্রেন লাইনের নিচ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ম্যানহাটনগামী একটি ট্রেন শোকাবহ হর্ন বাজিয়ে সালাম জানায়।
Comments