ডাকসু নির্বাচন

‘বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে জিএস প্রার্থী হয়েছি’

আল সাদী ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে মনে করেন 'স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য' প্যানেলের প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়া।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি সাদী বলেন, 'উন্নত ক্যারিয়ারের সুযোগ ছেড়ে আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে, শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে।'

'২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের আধিপত্যের মধ্যে আমি সূর্যসেন হলে সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম, আমি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ছিলাম। প্রথম যখন ক্যাম্পাসে এসেছিলাম, তখন গেস্টরুম-গণরুম, মারধর করার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হলাম। আমি নিজে মার খেয়ে হসপিটালে ভর্তি হয়েছি। তখন থেকেই এই সংস্কৃতি ভাঙার প্রবল ইচ্ছা থেকেই গত ডাকসু নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম। নির্বাচিত হওয়ার পর আমার হলের নির্যাতনের মাত্রা অনেক কমিয়ে আনতে কাজ করেছি,' বলেন তিনি।

সাংবাদিক-ছাত্রনেতা হিসেবে সাদী বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের সঙ্গে কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, 'প্রশাসনিক, ডিপার্টমেন্ট, হলের নানা সমস্যা দেখেছি, মেয়েদের নিরাপত্তার সমস্যা দেখেছি। গতবার নির্বাচিত হওয়ার পর হলে মাদকের বিস্তার, মাস্টার্সের পরও হলে থাকা, বহিরাগতদের থাকা, অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখানো, চাঁদাবাজি বন্ধে কাজ করেছি। এসব দেখে আমার মনে হয়েছে এখানে অনেক কিছু করার আছে।'

জিএস পদে নির্বাচিত হলে আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সাদী। 'শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সবসময় ছিলাম, এখনো আছি, নতুন যারা আসবে তাদের কাছেও যাব, আমার স্বপ্নের কথা বলব, তাদের স্বপ্নের কথা শুনব, সমস্যা শুনব, পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার কথা শুনব, আর সে অনুযায়ী কাজ করব,' বলেন তিনি।

ক্যাম্পাসে সব দলের সহাবস্থান এবং একইসঙ্গে দলীয় আধিপত্যমুক্ত ক্যাম্পাস চান আল সাদী ভূঁইয়া।

গতবারের তুলনায় এবারের নির্বাচনের পরিবেশ খুবই আনন্দ-উৎসবপূর্ণ বলেও মনে করছেন এই প্রার্থী।

আল সাদী ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত

তার ভাষ্য, 'ক্যাম্পাসে মনে হচ্ছে ঈদের আনন্দ। সিনিয়র-জুনিয়র সবাই সবার খোঁজ নিচ্ছে, প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, নতুনদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আমাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে, কিন্তু আমরা এক হয়ে কাজ করছি। ছাত্রশিবিরের জিএস প্রার্থী আমাকে ফুল দিয়ে গেছেন, ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী ফুল দিয়ে গেছেন।'

ভোটের দিন ক্যাম্পাসে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে 'অযৌক্তিক ও অতিরঞ্জিত' বলে মন্তব্য করেন এই ছাত্রনেতা। তার মতে, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ভালো বোঝে, তারা জানে কোনটা ভালো কোনটা মন্দ। সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বেই থাকুক। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন নেই। শিক্ষার্থীরা যেটা ভালো মনে করবে, তারা সেটাই করবে। আমাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশই যথেষ্ট। সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত থেকে প্রশাসন যদি সরে না আসে, তাহলে মনে করব, তাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।'

এ অবস্থায় নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাদী। তিনি বলেন, 'একটি পক্ষ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শক্তির মতো শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেটকে মতামতকে ভয় পায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি অংশ জানে ডাকসু তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে পারে। এজন্য একটা পক্ষ ডাকসু নির্বাচন যেন না হয়, তার চেষ্টা করছে বলে আমি মনে করছি।'

নির্বাচনের প্রচারণায় তেমন কোনো বাজেটও নেই তার। বলেন, 'গত নির্বাচনেও আমার টাকা লাগেনি। আমি দেখাতে চাই ব্যানার-পোস্টার ছাড়াই শুধু শিক্ষার্থীদের দরজায় দরজায় গিয়ে জয়ী হওয়া যায়।'

'আমার প্যানেলের অন্য প্রার্থীরাও দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করে আসছেন। পাহাড়ি আছেন, উত্তরের বন্যাপীড়িত, উপকূলীয় এলাকার প্রার্থী আছেন। এই ডাইভার্সিটির সবাই যদি জিতে আসেন, তাহলে বাংলাদেশের সব এলাকার মানুষ জিতে যাবেন,' বলেন সাদী ভূঁইয়া।

Comments

The Daily Star  | English
foreign travel rules for government officials Bangladesh

Advisers, secretaries flouting foreign travel rules

CA upset over repeated violations; officials urged to follow directives ahead of election

1h ago