নুরুলের ভক্ত রাসেলকে পিটিয়ে হত্যা, ‘বাধা দেওয়া হয় হাসপাতালে নিতেও’

গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব তেনাপচা গ্রামে রাসেল মোল্লার বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি। ছবি: সুজিত কুমার দাস/ স্টার

'আমার ছেলে তো কোনো দোষ করেনি। সে কেবল নুরুল হকের ভক্ত ছিল। দরবারে থাকায় ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলল। দরবার থেকে মারতে মারতে আনার পরে ওরা আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিতে দেয়নি। হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়িতে তোলা হলে গাড়ি থেকে নামিয়ে আবার পিটিয়েছে।'—বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন গোয়ালন্দের দরবার শরিফে হামলায় নিহত রাসেল মোল্লার মা আমেনা বেগম।

গতকাল শুক্রবারের ওই ঘটনার পর আজ শনিবার সকালে নিহত রাসেল মোল্লার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব তেনাপচা গ্রামে রাসেলের বাড়িতে স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। বাড়ির উঠানে মা আমেনা বেগমকে ঘিরে বিলাপ করছেন স্বজনেরা। আর ঘরের ভেতর দুই শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন রাসেলের স্ত্রী হাসি আক্তার।

নিহত রাসেল মোল্লা (৩০) পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন। নুরাল পাগলার ভক্ত হিসেবে তাকে সবাই চিনত। পাঁচ বছর আগে হাসি আক্তারকে বিয়ে করেন। তাদের চার বছরের এক মেয়ে ও দুই বছরের এক ছেলে রয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা আমেনা বেগম বলেন, 'আমার বাজানকে (ছেলে) যারা মেরে ফেলেছে, তাদের বিচার আমি আল্লাহর কাছে দিয়ে রেখেছি। আল্লাহ তাদের বিচার করবে।'

রাসেলের স্ত্রী হাসি আক্তার জানান, রাসেল শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় কিছুদিন ধরে ট্রাক চালাচ্ছিলেন না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি থেকে বের হন। শুক্রবার সকালে স্বামীর সঙ্গে শেষবার কথা হয় তার। তখন রাসেল জানিয়েছিলেন, তিনি দরবারে আছেন এবং সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবেন।

কান্না করতে করতে হাসি আক্তার বলেন, 'আর তো ফেরা হলো না তার। আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমার এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে এখন কে দেখবে?'

শুক্রবার দরবারে হামলার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাসেলের ছোট ভাই সাজ্জাদ মোল্লা (২২)। তিনিও গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলা থেকে বাঁচতে তিনি দরবারের তিনতলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দেন। এতে তার বাঁ পায়ের গোড়ালি ভেঙে যায়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাজ্জাদ মোল্লা সেই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, হামলাকারীরা যখন ভাঙচুর ও লুটপাট চালাচ্ছিল, তিনি বাধা দিতে গিয়েছিলেন। তখন তার ওপর হামলা করা হয়। চাপাতির কোপ ঠেকাতে গিয়ে তার ডান হাতে গভীর ক্ষত হয়েছে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা ভবনে আগুন ধরিয়ে দিলে তিনি প্রাণ বাঁচাতে ছাদ থেকে লাফ দেন।

রাসেলের বাবা মো. আজাদ মোল্লা জানান, ছেলের লাশ ফরিদপুর থেকে বাড়িতে আনার প্রক্রিয়া চলছে। আজ আসরের পর স্থানীয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

এ ঘটনায় মামলা করবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখনো কিছু ভাবিনি। পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে পরে সিদ্ধান্ত নেব।'

প্রসঙ্গত, 'শরিয়তবিরোধী কবর' দেওয়ার অভিযোগ তুলে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা চালায় একদল লোক। এ সময় সংঘর্ষে রাসেল মোল্লা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। হামলাকারীরা একপর্যায়ে নুরাল পাগলার কবর খুঁড়ে লাশ তুলে এনে পুড়িয়ে দেয়।

Comments

The Daily Star  | English
Local gold price hiked

Gold hits all-time high

From tomorrow, each bhori of 22-carat gold will cost Tk 181,487

33m ago