কমছে কৃষিজমি, বাড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সড়কের ধারে আবাসনের জন্য কৃষি জমির প্লট ঘিরে রাখা হয়েছে ইটের দেয়াল দিয়ে। ছবি: স্টার

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ফসলি বা প্রকৃত আবাদি জমির পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এতে দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কৃষি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে আবাদি জমি ১৯.৮৩ লাখ একরে নেমে এসেছে, যা আগে ছিল ২০.০৮ লাখ একর। অর্থাৎ, মাত্র তিন বছরে আবাদি জমি কমেছে ১ শতাংশ, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ হ্রাসের ঘটনা। নতুন আবাসন, রাস্তাঘাট, শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কারণে ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, 'এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আবাদি জমি কমছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ ও শহুরে বসতি বাড়ছে। এমনকি ফসলি জমির মাঝখানেও বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে।'

কৃষি অর্থনীতিবিদ সাত্তার মণ্ডল সতর্ক করে বলেন, শিল্পায়নের কারণে কৃষিজমি আরও কমবে। তার মতে, 'অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তবে আমাদের মতো দেশে বড় জায়গা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মতো বিষয়গুলোকে উৎসাহিত করা উচিত নয়।'

তিনি এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ১০০ একর জমি বরাদ্দের উদাহরণ দিয়ে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক কম জায়গায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

'বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল স্ট্যাটিস্টিকস ২০২৪' শীর্ষক বিবিএসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে দেশের ২ শতাংশ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। সাত্তার মণ্ডল বলেন, 'বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। অকৃষি খাতে জমি চলে যাওয়া বন্ধ করতে না পারলে সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।'

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) 'রাইস ভিশন ফর বাংলাদেশ: ২০৫০ অ্যান্ড বিয়ন্ড' শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালে দেশের জনসংখ্যা হবে ২১ কোটি ৫৪ লাখ। তখন প্রতি বছর ৪ কোটি ৪৬ লাখ টন চালের প্রয়োজন হবে। গবেষণায় বলা হয়, ধান চাষের জমির পরিমাণ না কমলেই কেবল এই চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৪ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়েছে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শাহিদুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, 'এটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। জনসংখ্যা বাড়ছে, অথচ খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষিজমি সংকুচিত হচ্ছে। অথচ আমরা দেখছি ধানের জমি কমে যাচ্ছে।

'কেন আমরা গ্রামীণ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করতে পারছি না?' প্রশ্ন তোলেন তিনি।

উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, 'বোরো ধানের ফলনের ক্ষেত্রে আমরা ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে আছি। আমাদের প্রয়োজনীয় সব খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করা হয়তো সম্ভব হবে না। তাই উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে আমাদের কৃষিব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে হবে।'

কৃষি সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিঞা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষিজমি রক্ষা করতে একটি নীতি প্রণয়নের কাজ করছে। ইতিমধ্যে এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় এই নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি ফসল জোনিং ম্যাপ (শস্য বিন্যাস মানচিত্র) তৈরি করবে বলেও জানান তিনি।

সচিব আরও বলেন, 'সারা দেশের জন্য একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। অন্যথায় কৃষিজমি রক্ষা করা অসম্ভব হবে। সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি রিসোর্ট এবং আবাসিক কমপ্লেক্সের মতো ব্যক্তিগত উদ্যোগেও কৃষিজমি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা বন্ধ করতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

People from all walks of life arrive by bus, train and other modes of transport

2h ago