স্কুলে নাচ-গানের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিরোধ পরিহারের আহ্বান ৫১ নাগরিকের

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও নৃত্যের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিরোধ পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৫১ নাগরিক।
আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।
তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে একটি পক্ষের লাগাতার বক্তব্য, বিবৃতি, কর্মসূচি গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে।
বিবৃতিদাতারা বলছেন, সঙ্গীতের শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে বিরোধিতা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিপরীত।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে জুলাই গণবিস্ফোরণে সকল শ্রেণি-পেশা এবং ধর্ম-মতের মানুষ অংশ নিয়েছিল। তবে সফল অভ্যুত্থানের পরপরই নানা ধরনের বিভক্তি তৈরির অপপ্রয়াস চলছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত ও নাচের শিক্ষক বাতিলের দাবি এ বিভাজনকে আরও জটিল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে।'
'আমরা মনে করি, শিশুর নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি মেধা ও মননের বিকাশে সঙ্গীত এবং নৃত্যকলার প্রয়োজনও রয়েছে। সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে শিশুরা আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যকে নিজের ভেতরে ধারণ করতে সক্ষম হবে। বিশ্ব সংস্কৃতির পরিসরে বাংলাদেশের হয়ে তারা অংশ নিতে পারবে,' বলেন বিবৃতিদাতারা।
তারা আরও বলছেন, 'পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে, ইসলামি সভ্যতায় গানের চর্চা ও সাধনার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। গান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলাম তার সৌন্দর্য্যের প্রকাশ ঘটিয়েছে। যা মানুষকে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেছে।'
'বাংলাদেশে গান, নাচ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। এখানকার শিশুদের অধিকার রয়েছে তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। আমরা মনে করি এ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার পরিণতি সুখকর হবে না,' যোগ করা হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিদাতা নাগরিকরা স্মরণ করিয়ে দিতে চান যে, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচাররা সক্রিয়। নিজেদের মধ্যে বিভাজন থাকলে তাদের ফিরে আসার পথ সুগম হবে।
'এ অবস্থায় আমরা মনে করি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মশিক্ষকের যে দাবি উঠেছে তা মেনে নিয়েও সঙ্গীত শিক্ষক বহাল রাখা ন্যয়সঙ্গত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে স্থাপন শিশুর বিকাশের পরিবেশ সংকীর্ণ করবে,' বলেন বিবৃতিদাতারা।
বিবৃতিতে সই করেছেন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ফাতেমা শুভ্রা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রায়হান রাইন, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোস্তফা নাজমুল হাসান তমাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল ফজল, কবি লেখক ও সংগঠক নাহিদ হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলার অধ্যাপক হাবিব জাকারিয়া, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ, প্রকাশক সাঈদ বারী, কথাসাহিত্যিক জিয়া হাশান, লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক তুহিন খান, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী বাকী বিল্লাহ, গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ, কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র।
এতে আরও সই করেছেন, সিনিয়র সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কাজী জেসিন, কবি মৃদুল মাহবুব, কবি ও সাংবাদিক অর্বাক আদিত্য, কবি ও সাংবাদিক সৈকত আমিন, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভা, কবি সোয়েব মাহমুদ কথাসাহিত্যিক গাজী তানজিয়া, কবি ও সংগঠক চিনু কবির, কবি ও অনুবাদক রাফসান গালিব, সঙ্গীতশিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ইমামুল বাকের এপোলো, কবি হাসান জামিল, অভিনেতা সোহেল তৌফিক, কবি রিংকু রাহী, শিক্ষক ও লেখক নাফিদা নওরিন, সঙ্গীতশিল্পী ও চলচ্চিত্র গবেষক হারুন অর রশিদ, সাংবাদিক আরাফাত রহমান, ইউনিভার্সিটি অব মাল্টার ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলার খুর্শিদ রাজীব, থিয়েটার কর্মী আশরাফুল ইসলাম, কবি এনামূল হক পলাশ, কবি নকিব মুকশি, কবি ও কথাসাহিত্যিক সানাউল্লাহ সাগর, লেখক রাসেল রায়হান, লেখক শাদমান শাহিদ, সঙ্গীতশিল্পী মহীন্দ্রনাথ রায়, লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী আরিফ রহমান, কবি আফসানা জাকিয়া, লেখক সুলতান আকন্দ, কথাসাহিত্যিক পিন্টু রহমান, কবি পলিয়ার ওয়াহিদ, কবি ও মনোচিকিৎসক সাজ্জাদ সাঈফ, কবি তাজ ইসলাম ও সমাজকর্মী মালেকুল হক।
Comments