উৎসবে মাতোয়ারা শহরে শোকে নীরব রিপনের ঘর

রিপনের ছবি দেখলে ‘বাবা’ বলে ডাকতে থাকে তার ছেলে। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

দুর্গাপূজার আয়োজনে উৎসবমুখর পাড়া। কিন্তু, একটি বাড়ি এখনও নীরব—তুষ্টি চন্দ্র শীলের বাড়ি। আজও শোক তাদের সঙ্গী।

হবিগঞ্জ শহরের একটি ভাড়া বাড়িতে ১৫ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে থাকেন তুষ্টি। গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত হন তার স্বামী রিপন চন্দ্র শীল।

তাদের বাড়ির পাশেই পূজামণ্ডপ—রঙিন আলোয় মোড়ানো। ভেতরে, ভক্তরা হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব মাতোয়ারা। কিন্তু রিপনের বাড়িতে তার ছিটেফোঁটাও নেই।

'আমার জন্য কে নতুন পোশাক কিনবে? পূজায় আমাদের বাড়িতে এত কোলাহল হতো। এখন একেবারে খালি খালি লাগে,' চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন তুষ্টি।

তিনি বলেন, 'আমরা কেউই ভালো নেই। কিছুই ভালো লাগে না। খুব কষ্টে দিন কাটাই।'

২২ বছর বয়সী এই নারী বলেন, 'সবাই আমাকে বলে, কেঁদো না। কিন্তু কীভাবে তাকে ভুলবো? অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু, শুধু তাকেই মনে পড়ে।'

পূজায় সবার চাওয়া পূরণ করতে ব্যস্ত হয়ে যেত রিপন। স্ত্রীর শাড়ির সঙ্গে মানানসই জুতা, গয়না এনে দিতো। সেইসব দিনের কথা স্মরণ করে তুষ্টি বলেন, 'পূজা আসে আর আমার ভেতরটা যেন পুড়ে যায়।'

গত বছরের ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতার সংঘর্ষে হবিগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হলে গুলিবিদ্ধ হন ২৭ বছর বয়সী রিপন। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তার পরিবারে রয়ে গেছেন স্ত্রী তুষ্টি, শিশু পুত্র আবির, অসুস্থ ভাই ও বৃদ্ধ মা।

আবিরের বয়স এখন ১৫ মাসেরও বেশি—সবে কথা বলতে শুরু করেছে। চোখের পানি আটকে রেখে কাঁপা গলায় তুষ্টি জানান, রিপনের ছবি দেখলে 'বাবা' বলে ডাকতে থাকে ছেলেটা।

রিপন যখন মারা যান, তখন আবিরের বয়স মাত্র তিন মাস। ছেলের মুখে 'বাবা' ডাক শুনে যেতে পারেননি তিনি।

তুষ্টি বলেন, 'জীবন খুব কঠিন হয়ে গেছে। ঋণ শোধ করা, সংসারের খরচ চালানো—সবই করতে হচ্ছে। সরকারি ও স্থানীয়দের সাহায্য নিয়ে কোনো রকমে দিন চলে যাচ্ছে।'

পরিবারটি এখন ভাড়া বাড়িতে থাকে। তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে তীব্র আর্থিক কষ্ট।

রিপনের একমাত্র বড় বোন চম্পা রাণী বিশ্বাস বলেন, 'ওই দিন রিপনকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছিলাম। শুনলো না।' এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তাদের মা রুবি রানী শীলের বেশ বয়স হয়েছে। সন্তান হারিয়ে তিনি যেন বাকরুদ্ধ।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহীদুল হক মুন্সীর কাছে রিপন হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, 'তদন্ত চলছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।'

তিনি জানান, রিপন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি।

Comments