নাসির স্যারের শিশুরাজ্য

নাসির স্যারের শিশুরাজ্য। ছবি: আনিস মণ্ডল/স্টার

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়াতে বসবাস করেন নাসির উদ্দিন। এলাকার মানুষ তাকে ডাকেন নাসির স্যার। তিনি বসতবাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক শিশুরাজ্য।

কয়া বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে গড়াই নদী। বাজার থেকে গড়াই নদীর দিকে একটু এগোলেই কানে ভেসে আসে শিশুদের কোলাহল। আরেকটু এগোলেই বিশাল বাগান। হ্যাঁ, এই বাগানটাই নাসির স্যারের শিশুরাজ্য।

সেখানে এক বিঘার জমির ওপর বিশাল একটি বাগান। চারদিকে দুর্লভ প্রজাতির গাছগাছালি। তার মধ্যে খেলায় মেতে আছে শিশুকিশোররা। আর বাগানের মাঝখানে আছে কয়েকটি ছোট ছোট ঘর। যেখানে শোভা পাচ্ছে ঐহিত্যবাহী তৈজসপত্র ও পুরনো সংবাদপত্র-ম্যাগাজিনের সংগ্রহশালা।

ছবি: আনিস মণ্ডল

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নাসির উদ্দিনের বাগানটি কেবল বাগান নয়। বরং গ্রামের শিশুদের শিক্ষা ও বিনোদন কেন্দ্র।

নাসির উদ্দিন ১৯৪৬ সালে এই কয়া গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে বন্ধু সুশান্ত সিকদার ও দুলাল চক্রবর্তীর সঙ্গে গড়ে তোলেন কয়া নৈশ বিদ্যালয়। তখন তিনি দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ওই স্কুলের মাধ্যমে গ্রামের অনেক মানুষকে সাক্ষরতার আলো দেন তারা। দীর্ঘ ১০ বছর চলে সেই স্কুল। নাসির উদ্দিন ১৯৬৯ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৭ সালে তিনি অবসরে যান।

নাসির উদ্দিনের শিশু রাজ্যে গিয়ে দেখা যায়, ১০ থেকে ১৫ জন শিশু নাগরদোলায় খেলছে। পাশে আরও কয়েকজন দৌড়াদৌড়ি করছে। সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন একজন মা। খেলার ফাঁকে ফাঁকে তিনি তার সন্তানকে খাবার দিচ্ছেন।

ছবি: আনিস মণ্ডল

পাশেই বসে আছেন নাসির উদ্দিন। তিনি তখন সংবাদপত্র পড়ছিলেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি শিশুদের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। তাই ওদের নিয়েই আছি।'

তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠান শিশুদের জন্য ভয়ডরহীন একটি রাজ্য। এখানে শিশুরা আপন মনে খেলাধুলায় মেতে থাকে। এখানে খেলতে এলে বাবা-মা বাধা দেন না।

'আজকাল অনেক মা-বাবা বলেন, আমার এখানে না এলে শিশুরা খেতে চায় না। অনেকে শিশুকে খাওয়াতে কার্টুন দেখায়। কিন্তু আমার এলাকার বাবা-মা তাদের সন্তানকে খাওয়ার জন্য শিশুরাজ্যে নিয়ে আসেন,' বলেন তিনি।

ছবি: আনিস মণ্ডল

সেখানে সন্তানকে নিয়ে আসা মা হাসনাহেনা বলেন, 'আমার ছেলের বয়স চার বছর। ও সারাদিন এখানে থাকলে আমার কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। আমি নিজেও এই বাগানে খেলাধুলা করেই বড় হয়েছি। এখানে সবশিশু নিরাপদে থাকতে পারে।'

সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন একটি ঘরে নিয়ে যান। সেখানে বিভিন্ন পত্রিকা, পরিবেশ ও বিজ্ঞান নিয়ে লেখা ম্যাগাজিন থরে থরে সাজিয়ে রাখা।

ছবি: আনিস মণ্ডল

তার ভাষ্য, 'উপজেলা প্রশাসন এই ঘরটা নির্মাণ করে দিয়েছে। তাদের এই ঋণ আমি মনে রাখব। নিজের জন্য কিছু চাওয়ার নেই। এই ঘরে যা কিছু সংগ্রহ তা শিশুদেরই কাজে লাগবে।'

কুমারখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিকাইল ইসলাম বলেন, 'শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান নয়, শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে তিনি অবদান রাখছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নাসির উদ্দিনের এই উদ্যোগে শিশুকিশোর ছাড়াও উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা সবসময় থাকবে। সেখানে কিছুটা জায়গা বরাদ্দ দেওয়া ও বই দেওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।'

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

1h ago