দুই দিনেও মেরামত হয়নি ঢাকী নদীর বাঁধ, তলিয়েছে তিন হাজার বিঘার আমন

খুলনার দাকোপ উপজেলায় ঢাকী নদীর জোয়ারে ভেসে যাওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধটি দুই দিনেও মেরামত করা যায়নি। এতে উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে তিন হাজার বিঘার আমন ধান। স্থানীয়রা বলছেন, এখনই পানি আটকাতে না পারলে মাছ ও ধানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া হরিসভা মন্দিরসংলগ্ন ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে বটবুনিয়া গ্রাম ও নিশানখালী বিলে পানি ঢুকে পড়ে। বুধ ও বৃহস্পতিবার স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি মেরামতের চেষ্টা করেন। তবে বিকেল পর্যন্ত মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, তিনটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে দাকোপ উপজেলা। উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতায় পড়েছে পানখালী ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন এবং চালনা পৌরসভা।
বটবুনিয়া গ্রামে গত বছরও দুই জায়গায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল। এ ছাড়া গত দুই বছরে বড়বুনিয়া বাজারের পুরোনো প্রায় সব স্থাপনা নদী গর্ভে চলে গেছে। স্থানীয় দোকানিরা গ্রামের ভেতরে কোনোমতে ছোট ছোট দোকান করে টিকে আছেন। বাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। পাউবোর সহায়তায় স্থানীয় লোকজন মাটি ও জিও বস্তা দিয়ে সেটা কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে ভরা জোয়ারে মুহূর্তের মধ্যে মূল বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার ঢাকী নদীতে চলে যায়। এরপর জোয়ারের পানি হু হু করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। মুহূর্তেই তিলডাঙ্গার উত্তর কামিনীবাসিয়া, বটবুনিয়া, নিশানখালী ও আড়াখালী গ্রাম প্লাবিত হয়। তারপর থেকে জোয়ারে কয়েক দফায় প্লাবিত হয়েছে এলাকা।
স্থানীয় তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সঞ্জয় সদরদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বুধবার সকাল থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে চেষ্টা চালিয়েও বাঁধটি মেরামত করে পানি আটকানো সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে এলাকার তিন হাজার বিঘা আমন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখনই বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে না পারলে আমন ফসলসহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনই ভাঙা বাঁধের আয়তন বাড়ছে। এখন প্রায় ২০০ মিটারের বেশি বাঁধ নদীতে চলে গেছে। এটি আরও বড় হবে ধীরে ধীরে। এলাকাবাসী নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন গাজী বলেন, এই বাঁধটা অনেক দিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আমরা বহুবার বলেছি, কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি বলেন, গত এক বছরে ৩১ নম্বর পোল্ডারের কাজীবাছা, শিবসা, ঢাকী নদীর বিভিন্ন জায়গার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। গত বছরের মে মাসে বটবুনিয়া বাজারে পাশে ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। কিন্তু তারপরও পানি উন্নয়ন বোর্ড যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এরই মধ্যে ৩০২ হেক্টর আমন খেত প্লাবিত হয়েছে। তবে ধানগুলো এখনো দণ্ডায়মান আছে। ভাটির সময়ও দাঁড়িয়ে আছে। এখন ভেজিটেটিভ স্টেজ চলছে, ফার্টিলাইজেশন স্টেজ হলে ধানগুলো পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হতো। আমরা পানি পরীক্ষা করে দেখেছি, পানির লবণাক্ততা এখনো নিরাপদ মাত্রায় আছে।
তিনি আরও বলেন, এই বাঁধটি যদি আগামীকাল বা আরও দুই-একদিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনান যায়, তাহলে ধান রক্ষা করা সম্ভব। আর নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে বাঁধটি আরও চওড়া হবে এবং পানি আরও বেশি করে ঢুকবে। এতে আমাদের কৃষিতে বিশেষ করে আমন ও সবজিতে বড় ক্ষতি হবে। এই ক্ষতি সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ভাঙন রোধে কাজ চলছে। আমরা বাঁশ, বস্তা—এগুলো দিয়ে সহায়তা করছি। তবে বাঁধের নিচে দেওয়া জিও ব্যাগ ভেসে গেছে। স্থানীয়রা বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করছেন। এখনো সফল হতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, জাইকার একটি ৫০০ মিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান। আমরা আরও ৪০০ মিটারের জন্য ডিপিপি পাঠিয়েছি। এটি প্ল্যানিং কমিশনে আছে।
আশরাফুল আলম বলেন, এছাড়া এই পোল্ডারের জন্য ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প স্টাডি করে রেডি করা হয়েছে। সেখানে ২২ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ থাকবে। এটি যদি অনুমোদন হয়, তাহলে এই পোল্ডারের যে সমস্যা আছে, তা সমাধান হবে।
Comments