দীপাবলির আলোর আশায় রংপুরের কুমাররা

ছবি: স্টার

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব 'দীপাবলি' উদযাপনকে ঘিরে রংপুর অঞ্চলের কুমারপাড়াগুলোতে এখন ব্যস্ততার আমে। মাটির প্রদীপে ভরে গেছে কুমারদের কর্মশালা।

রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলার—লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম—প্রায় তিন হাজার কুমার পরিবার দিনরাত তৈরি করছেন হাজারো ছোট মাটির প্রদীপ। স্থানীয়ভাবে এগুলো 'দিয়ার' নামে পরিচিত।

আগামীকাল সোমবার উদযাপন হবে দীপাবলি উৎসব। কুমারদের প্রত্যাশা, এ মৌসুমে ভালো আয় হবে।

ছবি: স্টার

দীপাবলির আগে বাজারের চাহিদা মেটাতে তারা সময়ের সঙ্গে লড়ছেন। প্রতিটি পরিবার ২০ হাজার থেকে ৮০ হাজার পর্যন্ত প্রদীপ তৈরি করছেন।

স্থানীয় কুমারদের হিসাবে, রংপুর অঞ্চলে এবার মোট চাহিদা প্রায় ১২ কোটি প্রদীপের।

স্থানীয় বাজারে এখন ১০০টি সাধারণ মানের প্রদীপ বিক্রি হচ্ছে ১৫০–১৬০ টাকায়, মাঝারি মানের ২২০–২৫০ টাকায়, আর উন্নত মানের প্রদীপ বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৩৫০ টাকায়।

কুমাররা বলছেন, জ্বালানিকাঠ ও কাদামাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কুমারপাড়া গ্রামের কুমার মোহন চন্দ্র পাল (৫৫) বলেন, 'এবার প্রায় ৮০ হাজার প্রদীপ তৈরি করেছি। পাইকাররা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে কিনে নিচ্ছেন। আমরা পাশের বাজারেও বিক্রি করছি। আমাদের গ্রামে ৬০টি কুমার পরিবার প্রদীপ তৈরিতে ব্যস্ত। প্রত্যেকেই ২০ থেকে ৮০ হাজার প্রদীপ বানাচ্ছে।'

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কুমারপাড়া গ্রামের বিষ্ণু চন্দ্র পাল (৪৫) বলেন, তারা তিন ধরনের প্রদীপ তৈরি করেন—ছোট, মাঝারি ও বড়।

'প্রথমে কাদামাটি দিয়ে প্রদীপ তৈরি করে রোদে শুকাই, পরে চুল্লিতে পুড়িয়ে নিই। এখন ১০০টি প্রদীপ তৈরি করতে ৩০–৭০ টাকা খরচ হয়। মাটি ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রদীপের দামও বেড়েছে,' বলেন তিনি।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পালপাড়া গ্রামের প্রবীণ কুমার শুভেন্দু নাথ পাল (৭০) চুল্লির পাশে ব্যস্ত ছিলেন। বললেন, 'একসঙ্গে ৩ থেকে ৫ হাজার প্রদীপ পোড়ানো যায়। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন জ্বলে, আর আগুন নিভে যাওয়ার ১২ ঘণ্টা পর প্রদীপগুলো বের করি। এবার আমাদের পরিবার ৭৫ হাজার প্রদীপ তৈরি করেছে।'

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার পালপাড়া গ্রামের নিত্যানন্দ পাল (৫০) বলেন, 'আমাদের মধ্যে অনেকে নিজেরা তৈরি না করে অন্য কুমারদের কাছ থেকে কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। আমি এবার তিন লাখ প্রদীপ বিক্রি করার চেষ্টা করছি।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুমারপাড়া গ্রামের কুমার যোগেন চন্দ্র পাল (৬০) বলেন, 'প্রদীপ তৈরি ও বিক্রি আমাদের জন্য মৌসুমি আয়। দীপাবলিতে প্রতি বছর প্রতিটি পরিবার ৬০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করে। এটা আমাদের সারা বছরের সংকটের সময়ে পরিবার চালাতে সহায়ক হয়।'

রংপুর শহরের মূলাটোল এলাকার ব্যবসায়ী রঞ্জন চন্দ্র দাস (৬০) বলেন, 'প্রতি বছর আমি বাড়ি, মন্দির ও দোকানে জ্বালানোর জন্য ৭০০ প্রদীপ কিনি। দীপাবলির রাতে প্রদীপ জ্বালালে মনে একধরনের শান্তি অনুভব করি।'

পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার হিন্দু পরিবার বসবাস করে। প্রতিটি পরিবার দীপাবলির জন্য ৩০০ থেকে ৮০০টি প্রদীপ কেনে—যা বাড়ি, মন্দির, শ্মশান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে জ্বালানো হয়।

লালমনিরহাট পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, 'দীপাবলির অবিচ্ছেদ্য অংশ দিয়ার। প্রদীপ জ্বালানো শুধু আনন্দের প্রতীক নয়, প্রার্থনারও অংশ—প্রয়াত আত্মার শান্তি ও পৃথিবীতে সাম্যের জন্য প্রার্থনা।'

তিনি বলেন, 'যখন দীপাবলির রাতে এসব মাটির প্রদীপের আলো আঙিনা ও মন্দিরে ঝলমল করবে, তখন রংপুরের কুমাররাও আলোকিত হবেন তাদের পরিশ্রমের প্রতিদান হিসেবে সমৃদ্ধির আলোয়।'

Comments

The Daily Star  | English

BNP opposes RPO amendment requiring alliance parties to use own symbols

Salahuddin says the change will discourage smaller parties from joining coalitions

7m ago