৫ বছরেও শেষ হয়নি কাজ, দুর্ভোগের কারণ হয়েছে সেতু

২০২০ সালের মাঝামাঝিতে কাজ শুরু হলেও আজ পর্যন্ত চালু করা যায়নি সেতুটি। ছবি: স্টার

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া-শাহপুর সড়কের ৪৫ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। তবে, পাঁচ বছর পরও অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে প্রকল্পটি।

সেতুর কাজ শেষ করতে এই বিলম্বের কারণে শিক্ষার্থী, চা শ্রমিক ও বৃদ্ধ মানুষসহ হাজারো গ্রামবাসীকে প্রতিদিন চলাচল করতে বাধ্য হতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে। ২০২২ সালের নভেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত সেতুটি ব্যবহার উপযোগী হয়নি।

ছবি: স্টার

সেতুর মূল কাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু, সংযোগ সড়ক ও অন্যান্য কাজ বাকি থাকায় সেটি চলাচলের যোগ্য হয়নি। সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিনই গ্রামের মানুষকে ১০ ফুট উচ্চতা থেকে ঝুঁকি নিয়ে নেমে এই জায়গাটি পার হতে হচ্ছে।

সেতু অসম্পূর্ণ থাকলেও ঠিকাদার ইতোমধ্যেই প্রকল্পের তহবিল থেকে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, 'আমি অসুস্থ মানুষ। এই জায়গাটা পার হতে গেলে খুব কষ্ট হয়। কোনো যানবাহন এই সেতু দিয়ে পার হতে পারে না। আমাদের বাধ্য হয়ে পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে পার হতে হয়।'

তিনি বলেন, 'এত টাকা খরচ করার পরেও সেতু যদি কাজে না লাগে তাহলে লাভ কী হলো?'

হতাশার কথা তুলে ধরে আরেক বাসিন্দা খাদিজা বেগম বলেন, 'প্রায় পাঁচ বছর ধরে এখানে সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় আমরা ব্যবহার করতে পারি না। কাজেই যদি না আসে, তাহলে সেতু বানিয়ে কী লাভ? এখনো পারাপার আরও আরও বিপদজনক হয়ে গেছে। আগে তো তাও কোনো রকমে চলার ব্যবস্থা ছিল। এখন সেটাও পারি না।'

এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে সেতুর জায়গাটি পার হতে হয় স্থানীয়দের। অন্যথায় ঘুরে যেতে হয় অনকেটা পথ। ছবি: স্টার

স্কুলশিক্ষার্থী মুন্না তাতি (১৪) বলছিল, 'প্রতিদিন ১০ ফুট লাফিয়ে সেতুর নিচে নেমে এই জায়গা পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। একবার পিছলে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছিলাম। বৃষ্টির দিনে স্কুলে যাই না এই জায়গাটা পার হতে সমস্যা হয় বলেই।'

স্থানীয় চা-শ্রমিক সারোথি বারোই বলেন, 'আমরা প্রতিদিন ভারী চা পাতার বস্তা নিয়ে এই এলাকা পার হই। বৃষ্টির সময় নদী উপচে পড়ে। তখন অনেক ঘুরে যেতে হয়। আমাদের দুর্ভোগের কথা কেউ ভাবে না।'

এলজিইডির হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুর রহমান বলেন, 'সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কাজে দেরি করছে সে। এই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে।'

ঠিকাদার নাসির মিয়াও বিলম্বের কথা স্বীকার করে বলেন, 'মূল কাঠামো প্রায় শেষ। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে কাজ কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। আমি এই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে এই প্রকল্পের বোঝা থেকে মাথা থেকে নামাতে চাই।'

স্থানীয় বাসিন্দা চিত্ত রঞ্জন দেববর্মা বলেন, 'এত বছর ধরে শুনে আসছি, এই মাসে হবে, পরের মাসে হবে। কিন্তু শেষ আর হয় না। সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় রোগী বা পণ্য পরিবহন করতে পারি না। শুধু সেতুর জন্য তেলিয়াপাড়া-সুরমা এলাকাটি কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia laid to eternal rest

Buried with state honours beside her husband Ziaur Rahman

10h ago