শ্যামাপূজার প্রতিপাদ্য দুঃখরূপং: যে মণ্ডপে ফুটে উঠেছে গাজার শিশুদের আর্তনাদ

ছবি: তাফসিলুল আজিজ/স্টার

পূজা মানেই আনন্দ আর সম্প্রীতির বন্ধন, সবাই মিলে মিশে উৎসবের বাঁধভাঙা উল্লাস। কিন্তু, সেই আনন্দের মাঝেও আলোয় মোড়া উৎসবে কোথায় যেন বিষাদের ছায়া। যে আনন্দ নিয়ে দর্শনার্থীরা পূজামণ্ডপে প্রবেশ করছেন, মুহূর্তেই যেন সেটা স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে।

মণ্ডপটির চারপাশ জুড়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার শিশুর কান্না, ধ্বংস আর মানবতার আর্তি মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। কেউ ক্ষুধার জ্বালায় আর্তনাদ করছে, কেউ জানাচ্ছে যুদ্ধ থেকে বাঁচার আকুতি। কেউবা মুক্তির পথ খুঁজছে।

এমনই এক প্রতিপাদ্যে মণ্ডপ সাজিয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বত্রিশ এলাকায় প্রগতি সংঘ নামে একটি পূজা আয়োজন সংগঠন। নাম দেওয়া হয়েছে 'দুঃখরূপং'।

ছবি: তাফসিলুল আজিজ/স্টার

জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার এই মণ্ডপটির ৭২তম বর্ষে শ্যামাপূজায় দুঃখ উন্মোচনের আয়োজন নিয়ে হাজির হয়েছে ভক্তদের সামনে।

ছবি: তাফসিলুল আজিজ/স্টার

মণ্ডপের চারপাশে টানানো প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে ফুটে উঠেছে গাজার ধ্বংসস্তূপে হারিয়ে যাওয়া শৈশব। কেউ কাঁদছে ধোঁয়ার মধ্যে, কেউ খুঁজছে হারানো মা-বাবাকে। কেউ দৌড়াচ্ছে খাবারের সন্ধানে। রাতে পূজাকালীন  আলোর খেলার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যায় সেই ছবিগুলোর ভয়ার্ত আর্তনাদের মুখ।

কালীমূর্তির চারপাশে সাজানো হয়েছে এই শিশুদের ছবি। সেটাই এনে দিয়েছে আলো আর অন্ধকারের খেলায় সাজানো প্যান্ডেলে এক অদ্ভুত নীরবতা। উৎসবের মাঝে ঠাঁই পাওয়া গাজার কঙ্কালসার শিশুদের ছবিগুলো পৃথিবীর গভীর দুঃখের বার্তা মনে করিয়ে দিচ্ছে বারবার। দর্শনার্থীদের চোখে মিশে গেছে বিস্ময় আর বেদনা।

কেউ নীরবে ফুল দিচ্ছেন শিশুদের ছবির সামনে, কেউ আবার কাঁধে বাচ্চাকে তুলে দেখাচ্ছেন মণ্ডপের আলো। দর্শনার্থীদের চোখে–মুখেও মায়াভরা আবেগ। কেউ নীরবে প্রার্থনা করছে, কেউ আবার মোবাইলে ক্যামেরায় বন্দি করছে শিশুগুলোর মুখ। পূজামণ্ডপ হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের কণ্ঠ, আর মানবতার পাঠশালা।

শত শব্দ আর আলোর ঝলকানিতেও পূজায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের ভাবাচ্ছে এই ছবিগুলো। সেই যুদ্ধের ভয়াল দৃশ্যই যেন ফুটে উঠছে মানুষের চোখে-মুখে।

ছবি: তাফসিলুল আজিজ/স্টার

পূজামণ্ডপে আসা বিশাখা ঘোষ বলেন, 'আমরা দূর থেকে শুধু যুদ্ধের কথা শুনি। কিন্তু সেটা যে কত নির্মম, তার প্রমাণ এই ছবিগুলো। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা মানবতা দেখতে চাই। যারা পূজায় এমন আয়োজন করেছেন, তাদের মানবতা জাগ্রত ছিল বলেই এটা ভেবেছেন। সেজন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ দিতে চাই।'

ছবি: তাফসিলুল আজিজ/স্টার

আয়োজকদের একজন সৈকত মজুমদার জানান, তাদের চাওয়া হচ্ছে আনন্দের মাঝেও মানবতার কথা ভাবুক মানুষ।

তিনি বলেন, 'আমরা বলতে চেয়েছি, আনন্দ তখনই পূর্ণ হয়, যখন তাতে থাকে মানবতার ছোঁয়া। আর যুদ্ধ নয়, একটি যন্ত্রণামুক্ত পৃথিবী চাই, শিশুদের জন্য নিরাপদ বিশ্ব চাই।'

ছবি: তাফসিলুল আজিজ/স্টার

সোমবার থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত চলবে শ্যামাপূজা। নিজেদের এই আয়োজনে মানবতার সেই স্বপ্নই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন আয়োজকরা।

ছবি: তাফসিলুল আজিজ/স্টার

এমন আয়োজনের কারণ হিসেবে প্রগতি সংঘের পূজা আয়োজক কমিটির সভাপতি রবীন সাহা বলেন, 'এই শিশুরা শুধু গাজার নয়, এরা মানবতার প্রতীক। মা কালী যেমন অন্ধকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, তেমনি আয়োজকরাও দাঁড়াতে চেয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে।'

তিনি বলেন, 'আমরা চেয়েছি মানুষকে বুঝাতে যে, একটি জাতি একটি দেশ কীভাবে নৃশংসতার শিকার হয়। এই শিশুদের আর্তনাদের ছবিগুলো দেখে যেন মানুষ তাদের সম্প্রীতি ও ভালবাসাকে জীবিত রাখে। সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।'

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia laid to eternal rest

Buried with state honours beside her husband Ziaur Rahman

10h ago