গণমাধ্যমের ওপর হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি

নির্বাচন নিয়ে টিআইবি'র প্রতিবেদন
টিআইবির লোগো | সংগৃহীত

জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আইকন শরিফ ওসমান হাদির পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাকস্বাধীনতার ওপর সংগঠিত এবং অভূতপূর্ব ধ্বংসাত্মক আক্রমণকে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি, নাগরিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার চেতনা এবং জুলাই অভ্যুত্থানের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত হিসেবে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো টিআইবির বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।

এতে আরও বলা হয়, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের জন‍্য গ্রেপ্তার করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টার্গেটেড শুটিংয়ে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারে সরকারের ব্যর্থতা, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গণরোষের ফলে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি নিরসনে অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। 

তিনি আরও বলেন, অন‍্যদিকে কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর বিজয়ের দাবিদার শক্তিগুলোর একাংশের আক্রোশপূর্ণ ও প্রতিশোধপ্রবণ আচরণ রাষ্ট্র এবং সমাজে নতুন ধরনের দমনমূলক প্রবণতা জন্ম দিচ্ছে। এর সরাসরি শিকার হয়ে উঠেছে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাকস্বাধীনতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও প্রতিরোধে সরকার কার্যকর কোনো অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে, বরং অতীতে অনুরূপ সংকটে নতজানু অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্র নিজেই অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এর ধারাবাহিকতায় প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের মতো শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে হামলা এবং কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই, বরং এসবই মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত ও স্বাধীন মতপ্রকাশকে পরিকল্পিতভাবে দমনের জ্বলন্ত উদাহরণ। স্বাধীন গণতন্ত্রপ্রত‍্যাশী বাংলাদেশে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক আক্রমণ শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং তা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব পালনে বিব্রতকর ব্যর্থতার সাক্ষ্য হয়ে থাকবে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক মানবাধিকার যেভাবে পদদলিত হয়েছিল, আজ সেই একই দমনমূলক বাস্তবতা নতুন রূপে ফিরে আসছে। বিগত ১৬ বছর যারা অধিকারহরণের শিকার হয়েছেন এবং জুলাই আন্দোলনের বিজয়ী হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন, তাদেরই অনেকের হাতে আজ মুক্ত গণমাধ্যম ও ভিন্নমতের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। ঘটনার পরম্পরা পর্যবেক্ষণে এমন মনে হওয়া মোটেও অমূলক নয় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও মূল্যবোধ চরমভাবে হুমকির মুখে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও সহাবস্থান, লিঙ্গ ও জেন্ডার বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি এবং বহুজাতি, বহুধর্মী ও বহুসংস্কৃতির সহাবস্থানের যে স্বপ্ন একাত্তর ও জুলাই ধারণ করেছিল, তা আজ ব‍্যাপক হুমকির মুখে।

তিনি আরও বলেন, ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আবেগাপ্লুত পরিস্থিতিকে পুঁজি করে মুক্ত গণমাধ্যম, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতাবিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল পতিত শক্তির ইন্ধনে সহিংসতা উসকে দিয়ে পরিস্থিতিকে পরিকল্পিতভাবে আরও ধ্বংসাত্মক পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ওসমান হাদির হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি এবং মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর, সমন্বিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই। তা না হলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত‍্যাশা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, একাত্তরের মূল‍্যবোধ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের মৌলিক আদর্শ গভীরতর সংকটে পড়বে, যার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।

Comments

The Daily Star  | English

Farewell

Nation grieves as Khaleda Zia departs, leaving a legacy of unbreakable spirit

8h ago