ডেইলি স্টার-প্রথম আলোতে হামলার স্বাধীন তদন্ত দাবি বিসিএসএনএর

ঢাকায় দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয়ে সংঘটিত সহিংস হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে শারীরিক নিপীড়নের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে উত্তর আমেরিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশি কমিউনিকেশন স্কলার্স ইন নর্থ আমেরিকা (বিসিএসএনএ)।

সেই সঙ্গে এ ঘটনাকে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর গুরুতর আঘাতের শামিল বলে মন্তব্য করেছে সংগঠনটি।

শুক্রবার সংগঠনটির ৩৩ জন সদস্যের সই করা বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বিসিএসএনএর পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের বিশ্বাস এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো প্রতিবাদ ছিল না। বরং এগুলো ছিল সমন্বিত হামলা, যা মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে এবং ভয় ও ধ্বংসের মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে স্তব্ধ করতে চেয়েছে।

আরও

হাদি হত্যা ও গণমাধ্যমে হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি অ্যামনেস্টির

আরও বলা হয়, যোগাযোগ, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিষয়ে গবেষক হিসেবে আমরা বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দীর্ঘ ও কঠিন সংগ্রামকে স্বীকার করি। ইতিহাস নথিবদ্ধ করা এবং প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দেশের গণমাধ্যম।

বহু দশক ধরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, সম্পাদকীয় স্বাধীনতা এবং পেশাদার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখে এসেছে দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর মতো গণমাধ্যম, যা একটি সুস্থ জনপরিসরের জন্য অপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো মানে নাগরিকদের জানার সামষ্টিক অধিকারকে আঘাত করা।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের জন্য সময়োপযোগী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়া এবং জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর কাজে বাধা দেওয়ার খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিসিএসএনএ।

বলা হয়, বর্তমান সরকার তার নিজস্ব গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশকৃত বিষয়— সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সাংবাদিকতাকে একটি পেশা হিসেবে সুরক্ষার সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং যারা তা চর্চা করেন তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

এর মধ্যে রয়েছে সহিংসতা প্রতিরোধ, হুমকির জবাবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, সাংবাদিক ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা। গণমাধ্যমের ওপর হামলায় দায়মুক্তি কেবল সহিংসতাকে আরও উসকে দেয়।

আরও

‘সরকারের ভেতর থেকে যোগসাজশ না থাকলে গণমাধ্যমের ওপর হামলা সহজ হতো না’

বিসিএসএনএ আহ্বান জানিয়েছে, দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোতে হামলার ঘটনায় দ্রুত, স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত পরিচালনা এবং পরিকল্পনা, উসকানি ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার।

সাংবাদিকরা যেন প্রতিশোধ পরায়ণতার ভয় ছাড়াই কাজ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সাংবাদিক, সম্পাদক, কর্মী ও জরুরি সেবাদানকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং রাষ্ট্রকে তার সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার— মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনর্ব্যক্ত ও সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষমতার দান নয়। এটি সমাজের দ্বারা অর্জিত ও রক্ষিত একটি অধিকার। নিউজরুমের ওপর হামলা মানেই গণতন্ত্রের ওপর হামলা।

আরও

গণমাধ্যমের ওপর হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক শক্তি, নাগরিক সমাজ ও সাধারণ নাগরিকসহ সব পক্ষকে সহিংসতা প্রত্যাখ্যান, সাংবাদিকদের সুরক্ষা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের নীতিতে অটল থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে সই করেন:

ড. ফাহমিদুল হক, বার্ড কলেজ

ড. আনিস রহমান, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন

ড. মো. খাদিমুল ইসলাম, ইস্টার্ন নিউ মেক্সিকো ইউনিভার্সিটি

ড. মোহাম্মদ রশিদ, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন মিসিসিপি

ড. দাউদ ইসা, পয়েন্ট পার্ক ইউনিভার্সিটি

ড. খাইরুল ইসলাম, ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটি

ড. জামাল উদ্দিন, করনেল ইউনিভার্সিটি

ড. নূর ই. মকবুল, ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা ইন হান্টসভিল

ড. নাজমা আখতার, নাজারেথ ইউনিভার্সিটি

ড. এম ডি আশরাফুল গনি, স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি

ড. জাহেদ আরমান, মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটি

ড. আহমেদ শাতিল আলম, ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমা

মীর ফজলে রাব্বী, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিন

শেরিন ফারহানা মনি, নিকলস স্টেট ইউনিভার্সিটি

মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটি

কাজী মেহেদী হাসান, সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি

মীর হাসিব, ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা

মানজুর মাসউদ, ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন–ম্যাডিসন

হাসান ফয়সাল, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন মিসিসিপি

প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় শিকাগো

মামুনর রশিদ, ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডার

মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা টুইন সিটিজ

সাজ্জাদ মাহমুদ শুভ, ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি

জেনিফার কামাল নোভা, সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি কার্বনডেল

এইচ এম মুর্তজা, ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমা

মো. আজাদ, ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটি

শাহ জাহান শুভ, ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা

মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ইউনিভার্সিটি অব উটাহ

ছোটন দেব নাথ, ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন–মিলওয়াকি

মেহেদী হাসান, টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি

শায়না ফারহিন, ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটি

বেলাল মুনতাসির, ইউনিভার্সিটি অব কানসাস

মো. সুমন আলী, ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন–মিলওয়াকি