এনটিএমসি বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে ৯৪ নাগরিকের বিবৃতি

ডিজিটাল যুগের নতুন যে বাস্তবতায় আমরা
ছবি: সংগৃহীত

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলুপ্তি এবং নাগরিক মতামতের ভিত্তিতে তৈরি 'টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর খসড়া অনুমোদনের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৯৪ নাগরিক।

শনিবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়, বিচার, সংস্কার নির্বাচনের অংশ হিসেবে আইন ও নীতিমালা সংস্কারের কাজ চলছে। নতুন অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও বিদ্যমান আইনের সংশোধনের ক্ষেত্রে অংশীজনদের অংশগ্রহণ থাকলেও মতামত উপেক্ষা করে হচ্ছে।

বিবৃতিদাতারা বলেন, 'আমরা গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি, টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলুপ্তি নিয়ে সরকারের মধ্যেই দুই মত দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্র এই নজরদারি রোধে ব্যাপক সংস্কার প্রবর্তনের পরিকল্পনায় পিছিয়ে এসেছে এবং নাগরিকদের ন্যূনতম অংশগ্রহণ ও মতামত ছাড়াই গত ১৫ অক্টোবর এনটিএমসির তিনটি নতুন নামের প্রস্তাবসহ একটি খসড়া আইন প্রস্তুত করেছে। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির নজরদারি আরও শক্তিশালী করার জন্য এই আইনের খসড়া তৈরি করেছে এনটিএমসি।'

'এরপর ১৭ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় একটি সংস্থার প্রধান দাবি করেন, তাদের মনিটরিং সার্ভিলেন্স দুর্বল করা হচ্ছে। এতে নাকি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড তদারকি করা কঠিন হয়ে যাবে। এরপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ ২০২৫ বিষয়ে একটি সভা আহ্বানের নির্দেশ দেন,' যোগ করা হয় বিবৃতিতে।

এতে আরও বলা হয়, 'প্রকাশিত খসড়ার কমপক্ষে দুটি নাগরিক সুরক্ষা সরিয়ে ফেলে আগামী সপ্তাহে আরেকটি নতুন খসড়া উপস্থাপন করা হবে। যা আসলে নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা ছাড়াই করা হচ্ছে। নজরদারির মত একটি স্পশর্কাতর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হতে চাচ্ছে, যা নাগরিকদের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং হাসিনা আমলের নজরদারি ক্ষমতা পুনরায় চালু হবার বাস্তবতা তৈরি করবে।'

'আড়িপাতা ও নজরদারির ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, কোন সংস্থাগুলো আড়িপাতার অনুমোদন পাবে এবং তদারকি করবে এবং ক্ষমতার বণ্টন কেমন করে নিরূপণ হবে, তা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যা ভয়ঙ্কর হাসিনার দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে,' যোগ করা হয় বিবৃতিতে।

প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, 'গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ হাসিনার আমলে ফিরবে না। তাই, ইন্টারনেট সংযোগ কোনো অবস্থাতেই বন্ধ, বিঘ্নিত বা সীমিত করা যাবে না। হাসিনা কর্তৃক মানবতাবিরোধী অপরাধ ও নিপীড়নের সহযোগী এনটিএমসি ভেঙে দিতে হবে।'

'অধ্যাদেশের ধারায় যোগাযোগমাধ্যমের নজরদারি করবার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচারের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বহাল রাখা এবং নাগরিকদের অংশগ্রহণ ও মতামত প্রাধান্য দিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুত করা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন দিতে হবে,' দাবি জানান বিবৃতিদাতারা।

এতে সই করেছেন—লেখক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, শিক্ষক ও দার্শনিক সলিমুল্লাহ খান, কথাসাহিত্যিক ও প্রকাশক মঈনুল আহসান সাবের, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, গবেষক ও গল্পকার রাখাল রাহা, লেখক ও শিক্ষক ফাহমিদুল হক, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, শিক্ষক ও অনুবাদক জি এইচ হাবীব, প্রবাসী সাংবাদিক ও শিক্ষক মাসকাওয়াথ আহসান, কবি কাজল শাহনেওয়াজ, কথাসাহিত্যিক জিয়া হাশান, শিক্ষক মাসউদ ইমরান মান্নু, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ডক্টরাল ফেলো আসিফ বিন আলী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিলা ঝুমা, গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. খোর‌শেদ আলম, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট রাহাত মুস্তাফিজ প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

17m ago