সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে: ইসি সানাউল্লাহ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
আজ রোববার নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'সার্বিকভাবে যদি আমরা বলি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আছে।'
হাদি হত্যাকাণ্ড নির্বাচনী মাঠে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে—এ কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, 'শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে একটি বড় ঘটনা এবং মাঠপর্যায়ে এটি সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলেছে। যারা নির্বাচনকে ব্যাহত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তারা মূলত নগর এলাকাকে লক্ষ্যবস্তু করছে। ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তারা খুবই সংগঠিত ও লক্ষ্যভিত্তিক কার্যক্রম চালাচ্ছে, যাতে প্রভাব সর্বোচ্চ হয় এবং জনমনে ভয় ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এসব বিষয় শনাক্ত করেছি।'
নির্বাচনী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো কার্যক্রমকে প্রতিহত করতে কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'এখন থেকে মাঠপর্যায়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হবে। তারা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেপ্তার কার্যক্রম চালাবে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের নিরাপত্তাও পুলিশ নিশ্চিত করছে।'
তফসিল ঘোষণার পর দেশের দুটি প্রধান গণমাধ্যমের কার্যালয়ে সহিংস হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যমের নিরাপত্তাহীনতা প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'যেসব বিষয় নিয়ে আপনারা উদ্বিগ্ন, আমরাও সেগুলো নিয়েই উদ্বিগ্ন। তফসিল ঘোষণার পর কিছু ঘটলে তা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনের ওপর, অন্তত পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে। আপনারাও বড় অংশীজন এবং আমাদের অংশীদার। আপনারা যদি নিরাপদ বোধ না করেন, তাহলে দায়িত্ব পালন করবেন কীভাবে? সে কারণেই আমরা এসব বিষয় খতিয়ে দেখছি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের জানানো হয়েছে, জাতীয় শোকের সময়ে মানুষের সমাগম ও ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরাস্ত করে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। ভবিষ্যতে এমন সুযোগ আর দেওয়া হবে না।'
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, '৫ আগস্টের পর থেকে মানবাধিকার সমুন্নত রেখে সব বাহিনীকে মানবিকভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া ছিল। আমরা মনে করি, কেউ কেউ এই ভালো উদ্যোগের সুযোগ নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা বাহিনী ও সংস্থাগুলোকে স্পষ্টভাবে বলেছি—যারা মানবিক, তাদের প্রতি আমরা মানবিক থাকব। কিন্তু যারা অপরাধ করতে চায়, ভাঙচুরে জড়াতে চায়, নির্বাচনী পরিবেশ ধ্বংস করতে চায় বা আমার ভাইকে হত্যা করতে চায়—তাদের প্রতি মানবিক হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বার্তাটি খুবই স্পষ্ট।'
দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস কমিশন পেয়েছে বলে জানান ইসি সানাউল্লাহ।
ইসি বলেন, 'আমাদের জানানো হয়েছে, অন্তত ২০ জনকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন—আমি নিশ্চিত, যারা এসব অপরাধ করেছে, তারা এর পরিণতি ভোগ করবে।'
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, `দুঃখজনকভাবে হাদি হত্যাকাণ্ড পুরো পরিস্থিতিকে অত্যন্ত জটিল করে তুলেছে। পুরো জাতি এতে মর্মাহত হয়েছে। আমাদের কাছে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় ঘটনা এবং এটি সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।'
তিনি যোগ করেন, 'এবার আমরা লক্ষ্য করছি, রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণভাবে আগের চেয়ে আচরণবিধি মানতে বেশি সতর্ক—যা একটি ভালো লক্ষণ। তবে দলগুলোর ভেতরে ও পারস্পরিকভাবে কিছু টানাপোড়েন ও বিরোধ রয়েছে—যাকে বলা যায় "এলবো স্পেসিং" সংক্রান্ত সমস্যা।'
এর আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন নির্বাচন ভবনে যান। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।


Comments