‘ঘাতকের তলোয়ারের চেয়েও আমাদের সংস্কৃতির শক্তি বেশি’
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড এবং এরপর গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলাকে একটি 'পরিকল্পিত রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের' অংশ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি।
আজ রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'হাদির হত্যাকাণ্ড এবং এসব প্রতিষ্ঠানে হামলাকে আমরা পরস্পর সংযুক্ত হিসেবেই দেখছি। আমরা এটিকে একটি সুপরিকল্পিত রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করছি।'
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে উদীচী ও ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রতিবাদে গান ও কবিতা পরিবেশন করা হয়।
সমাবেশের বক্তব্যে রফিউর রাব্বি বলেন, 'বাংলাদেশ যখন নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের দিকে এগোচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে সহিংসতার মাধ্যমে দেশকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।'
'এর আগেও যারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃত করতে চেয়েছিল, তাদের প্রতিরোধ করা হয়েছে। ইতিহাস যেন জনগণের পক্ষেই থাকে, সে জন্য আমরা রাজপথে দাঁড়িয়েছি।'
তিনি আরও বলেন, 'ঘাতকের বুলেট বা তলোয়ার যত শক্তিশালীই হোক না কেন, আমাদের সংস্কৃতির শক্তি তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি। আমরা সেটা আবারও প্রমাণ করেছি।'
'গুলির মোকাবিলা করতে হবে গান, কবিতা, চিন্তা ও সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে। এই বর্বরতায় আমরা ভয় পাই না। তারা যতই নিষ্ঠুর হোক না কেন, আমরা আমাদের শক্তি—সাহিত্য ও চিন্তা দিয়ে তাদের মোকাবিলা করব। এই মাটিতেই আমরা তাদের পরাজিত করব।'
গত বছরের গণআন্দোলনের পর উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে রফিউর রাব্বি দাবি করেন, দেশে একটি 'সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি' মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, 'ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে এক ধরনের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী পরিবেশ তৈরি হয়েছে।' এই প্রবণতা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'আমরা এই দেশে ধর্মীয় সহিংসতার অবসান চেয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিটি ধাপে দেশকে সেই কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিতে ব্যর্থ হয়েছে।'
'সরকার নির্বাচিত হোক বা অনির্বাচিত—নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তার দায়িত্ব। বিভিন্ন জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর যে হামলা আমরা দেখছি, তা প্রশাসনিক অবহেলা ছাড়া সম্ভব হতো না।'
তিনি হাদি হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জোটের সভাপতি মনি সুপান্থ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক দীনা তাজরিন।


Comments