গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলাকারীদের সহযোগিতা করেছে সরকার: আনু মুহাম্মদ

শাহবাগে জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন আনু মুহাম্মদ। ছবি: স্টার

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ছায়ানট ও উদীচীর ওপর হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে যে সরকার হামলাকারীদের সহযোগিতা করেছে বা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।

আজ বুধবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেছেন।

সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে 'ঐক্যবদ্ধ নাগরিক প্ল্যাটফর্ম' ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শ্রমজীবী মানুষ, শ্রমিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'এই ঘটনাগুলো যারা ঘটিয়েছে সেই হামলাকারীদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু তারা যখন আগুন দিচ্ছিল, ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল, তখন সেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী দাঁড়ানো ছিল। কিন্তু তারা ছিল নিষ্ক্রিয়। সরকারের এই বাহিনীর সদস্যদের দোষ দিতে পারি না। কারণ তারা তো উপরের নির্দেশ অনুযায়ী চলে।'

'উপর থেকে নির্দেশ কেন আসেনি' প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, 'সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া আছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা কী কারণে নিষ্ক্রিয় থাকল? কেন নীরব থাকল? তাদের এমন ভূমিকায় মনে হলো যে, যারা এই ধ্বংসযজ্ঞ বা পরিকল্পিত আক্রমণ করেছে—রাষ্ট্র ও সরকার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা সহযোগিতার ভূমিকায় নেমেছে।'

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, 'এই ঘটনাগুলো অবিশ্বাস্য, কিন্তু আকস্মিক নয়। কারণ গত কয়েক মাস ধরে ফেসবুকের মাধ্যমে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, আক্রমণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে, উসকানি দেওয়া হয়েছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার তো এগুলো অজানা থাকার কথা না।'

'আমরা দেখছি যারাই উসকানি দিচ্ছে আক্রমণ করছে, তারা হঠাৎ করে সেদিন আবির্ভূত হয়নি। তারা গত দেড় বছর ধরে সাংস্কৃতিক জগতে, মাজারে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করেছে। নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, গান-বাজনা-নাটক-মেলা সবকিছুর ওপর একটা আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে,' বলেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার রাতের হামলাকে 'পরিকল্পিত' উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, 'সেদিন শুধু হামলা হয়নি, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, বাদ্যযন্ত্র, কম্পিউটার ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ ধ্বংস ও লুট করা হয়েছে।'

দ্য ডেইলি স্টার ভবনে হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, 'ভবনের ভেতরে ২০ থেকে ২৫ জন সাংবাদিক আটকা পড়ে জীবননাশের ঝুঁকিতে ছিলেন। আগুন আরও কিছুক্ষণ জ্বললে তাদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ত।'

'সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর জীবন-ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গেলে তাকেও আক্রমণের শিকার হতে হয়। তাকে আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। অথচ তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরতন্ত্র, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরোধিতা করে আসছেন,' বলেন তিনি।

ছায়ানট প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'ছায়ানট শুধু একটি সংগীত প্রতিষ্ঠান নয়; এটি আমাদের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের অংশ। জনগণের অর্থে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানে সংগীত শিক্ষা, শিশু বিদ্যালয় ও গ্রন্থাগার ছিল—সবকিছু ধ্বংস করা হয়েছে।'

পরদিন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়ে হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'উদীচী পাকিস্তান আমলেরও আগের সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের প্রতীক। এর কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া সেই ঐতিহ্যের ওপর সরাসরি আঘাত।'

সরকারের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'জনস্বার্থ রক্ষায় সরকার নিষ্ক্রিয়, অথচ বিদেশি ও করপোরেট স্বার্থে চুক্তি করতে তারা অত্যন্ত সক্রিয়। এটি সরকারের ভেতরে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ও করপোরেট ফ্যাসিবাদের মিলনের প্রমাণ।'

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। ঐক্যই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার একমাত্র পথ।'

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শাহবাগ ও কাটাবান ঘুরে উদীচী কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia laid to eternal rest

Buried with state honours beside her husband Ziaur Rahman

11h ago