রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ

ভোর থেকেই মাদ্রাসা ময়দানে ঢুকছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা

বিএনপি নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এগুচ্ছেন সমাবেশস্থলের দিকে। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের জন্য নির্ধারিত মাদ্রাসা ময়দান আজ শুক্রবার ভোরে খুলে দিয়েছে পুলিশ। এর পর থেকে সেখানে ঢুকতে শুরু করেছেন গত ২ দিনে বিভাগের অন্য জেলা-উপজেলা থেকে আসা বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

এদিন ভোর ৬টায় ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের প্রবেশদ্বারগুলো খুলে দেয় পুলিশ। এর আগ পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের সমাবেশস্থলে ঢুকতে দেওয়া দেয়নি। এ ছাড়া নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আজ দুপুর ২টার আগে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করা যাবে না- এমন কথাও বলা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে।

রাজশাহী শহরের শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ের কাছে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি মাদ্রাসা ময়দান হিসেবে পরিচিত।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে বিএনপির যে বিভাগীয় গণসমাবেশ হচ্ছে তার ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার এই মাদ্রাসা মাঠে রাজশাহীর সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হবে। এদিন দুপুর ২টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টাতেই সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।

এ সময় এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু মাঠে প্রবেশ করেন এবং লাউডস্পিকারে বলতে থাকেন, 'কেন্দ্রীয় নেতারা শিগগির মঞ্চে আসবেন।'

বিএনপির আজকের সমাবেশের আগে বৃহস্পতিবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ার কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বুধবার রাত থেকেই রাজশাহীতে আসতে শুরু করেন। তারা সমাবেশস্থলের নিকটে শাহ মখদুম ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নেন।

রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা নেতা-কর্মীদের আপ্যায়নে শহরের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে স্থানীয় নেতারা ৩ বেলা খাবারের আয়োজন করেছেন।  

আজ সকালে সমাবেশস্থল এবং এর আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগেভাগে আসা বিএনপির যেসব নেতা-কর্মী শাহমখদুম ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের অনেকে খাবারের সন্ধানে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছেন। পরে তারা শহরের সড়কগুলো মিছিল নিয়ে প্রদক্ষিণ করেন।

সাড়ে ৮টায় সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর বিএনপি নেতা-কর্মীদের অনেকগুলো মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তাদের অনেকের হাতে ছিল দলীয় পতাকা ও ধানের শীষ। প্ল্যাকার্ড-ব্যানারে ছিল বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা।

এদিকে এই সমাবেশ ঘিরে পরিবহন ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে আজও পুরো রাজশাহী শহরের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে শহরে রিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায় নি।

ভোর থেকে রাজশাহীর ৩টি প্রবেশদ্বার- আমচত্বর, কাশিয়াডাঙ্গা এবং তালাইমারি দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিএনপি নেতা-কর্মীদের শহরে ঢুকতে দেখা যায়। তাদের অনেকেই সমাবেশে আসার পথে পথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

সমাবেশস্থল থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে নগরীর শালবাগান এলাকায় দেখা যায়, ২৪ জনের একটি দল হেঁটে যাচ্ছেন মাদ্রাসা ময়দানের দিকে। জানালেন, তারা এসেছেন নওগাঁর নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট এলাকা থেকে।

মান্দা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাদিকুল ইসলাম জানান, তারা শুক্রবার বেলা ৩টায় ফেরিঘাট থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেন। আসার পথের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা ৪টা ইজিবাইকে করে রওনা হিই। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মোহনপুরে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ কর্মীরা আমাদের গাড়ি থামায় এবং তল্লাশি করে। তারা আমাদের ব্যাগে কম্বল দেখে বুঝতে পারে যে আমরা সমাবেশে যাচ্ছি। তখন তারা আমাদেরকে মারধর শুরু করে। আমাদের ইজিবাইকগুলো ভাংচুর করে। সেখান থেকে নওগাঁর দিকে তাড়িয়ে দেয়।

'পরে আমরা আবার একত্রিত হই। ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে হেঁটে হেঁটে আবার রাজশাহীর দিকে আসতে শুরু করি। রাতে আমরা আম চত্বরে এক বিএনপি কর্মীর বাসায় ছিলাম। ভোর হলে শহরের দিকে রওনা দেই।'

এদিকে রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরের সবগুলো প্রবেশমুখে ও ১৭টি পয়েন্টে বসানো হয়েছে বিশেষ চেকপোস্ট। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে আছে পুলিশের কড়া নজরদারি।

পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শহরজুড়ে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো শহরের ওপর পুলিশ নজর রাখছে। এছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত আছেন। সমাবেশস্থল ও আশেপাশের জায়গাগুলোর জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এদিকে সমাবেশে যোগ দিতে ইতোমধ্যে রাজশাহীতে পৌঁছেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

নিত্যপণ্য, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিভাগিয় সমাবেশ করছে বিএনপি।

Comments

The Daily Star  | English

ACC won’t need approval to sue govt officials

The Anti-Corruption Commission will no longer require government approval to file cases against judges and public servants, according to the draft ACC Ordinance 2025.

7h ago