যতটুকু ঐকমত্য হবে তার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই: আমীর খসরু

যতটুকু ঐকমত্য হবে তার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তোলা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি প্রসঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ঢাকা নবনিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এদিন সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রদূত।
এ সময় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানে উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট সম্ভব কি না জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, 'যে জায়গাগুলো ঐকমত্য হবে, সেটা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। যেখানে ঐকমত্য হবে না, জনগণের কাছে আগামী নির্বাচনে নিয়ে যেতে হবে।'
'আগামী বাংলাদেশ কী রকম হবে—রাজনীতিবিদরা বসে সব সমাধান করে দেবে, এই দায়িত্ব কোনো দলকে বাংলাদেশের মানুষ দেয় নাই। যেখানে ঐক্য যতটুকু ঠিক আছে, না হলে আপনি জনগণের কাছে যান! আগামী নির্বাচনে আপনার ম্যান্ডেট নিয়ে আসেন,' বলেন তিনি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নভেম্বরে গণভোটের দাবি জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'নভেম্বরে গণভোট সম্ভব কি সম্ভব না এটা আলোচনার বিষয় না। আলোচনার বিষয়, যতটুকু ঐকমত্য হবে তার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। যতটুকু ঐকমত্য হবে, তার মধ্যে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। তার বাইরে তো প্রত্যেক দলের অনেক কিছু আছে, যেটা ঐকমত্য হয় নাই। বিএনপিরও অনেক ইস্যু আছে যেখানে ঐকমত্য হয় নাই। আমাদের কোনো অসুবিধা নাই, আমরা তো মেনে নিয়েছি।'
'অন্য অনেক দলের অনেক বিষয় আছে যেটা ঐকমত্যে আসে নাই। সুতরাং তাদেরকে আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে গিয়ে ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসতে হবে। তার বাইরে কিছু করার তো কোনো দলের অধিকার নাই। আর কোনো দলের এই অধিকারও নাই যে, জোর করে আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেবে,' যোগ করেন তিনি।
'সময় মতো' প্রার্থী ঘোষণা করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
একই এলাকায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে তাদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খসরু গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'বিএনপি একটা বড় দল। এখানে একাধিক প্রার্থী থাকবে, প্রতিযোগিতা থাকবে। দল যখন সিদ্ধান্ত দেবে (প্রার্থী ঘোষণা করবে) তার পেছনে সবাই নির্বাচনে সংযুক্ত হবে, কাজ করবে।'
জার্মানির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং এর বাইরে বিভিন্ন সহযোগিতা ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিএনপির একটা বড় প্রোগ্রাম আছে এক কোটি লোকের চাকরি ১৮ মাসে। সেই চাকরির জন্য আমরা স্কিল ডেভেলপমেন্টের ওপর জোর দিচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'টেকনোলজি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে আমরা জোর দিচ্ছি এ জন্য যে, টেকনোলজি ছাড়া আসলে অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে জার্মানির সঙ্গে আমাদের কো-অপারেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা আলোচনা করেছি আগামী দিনে জয়েন্টলি স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য কী কী করতে পারি।'
দুই দেশের বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খসরু বলেন, 'জার্মানি চীনে বিনিয়োগ করেছে এবং ভারতেও কিছু বিনিয়োগ করেছে। ইতোমধ্যে তারা বাংলাদেশকে মনে করছে আগামী দিনের বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো ডেস্টিনেশন। সুতরাং সেই জায়গায় বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ আমরা প্রত্যাশা করছি এবং তাদেরও উদ্যোগ আছে, ইন্টারেস্ট আছে।'
'বিনিয়োগের যে সমস্যাগুলো ছিল, এগুলো সমাধানের জন্য আমরা ক্লিয়ার কাট কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং কিছু দিন আগে সামিটে আমরা লিখিতভাবে বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তর করেছি। এটা আমরা প্রত্যেকটা দূতাবাসেও দিয়েছি। তারা জানে আগামী দিনে বাংলাদেশের বিনিয়োগের সত্যিকার পরিবেশটা কী হবে এবং কী কী রিফর্ম করতে হবে, ডিরেগুলেট করতে হবে, লিবারালাইজেশন করতে হবে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগের কোনো সমস্যা থাকবে না বাংলাদেশে,' বলেন তিনি।
খসরু বলেন, 'প্রত্যেকের যত কথা, আলাপ-আলোচনা হচ্ছে এটার শেষ কথা যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার আসবে। যেখানে তারা শর্ট টার্ম, মিড টার্ম ও লং টার্ম সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারবে। তারা সবাই সে অপেক্ষায় আছে।'
'আমরা সবাইকে ইকুয়ালি ট্রিটমেন্ট করছি। বাংলাদেশের স্বার্থে প্রত্যেকটি দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকবে এবং সম্পর্কটার মূল উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশের স্বার্থে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে। সুতরাং উই আর ওপেন টু অল, কোনো সমস্যা নাই,' যোগ করেন তিনি।
Comments