গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট

‘সরকারের ভেতর থেকে যোগসাজশ না থাকলে গণমাধ্যমের ওপর হামলা সহজ হতো না’

বিধ্বস্ত ডেইলি স্টার পরিদর্শনে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের নেতারা। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের ছত্রছায়া না থাকলে বা সরকারের ভেতর থেকে যোগসাজশ না থাকলে গণমাধ্যমের ওপর হামলা করা সহজ হতো না বলে মনে করে তিন দলীয় গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট।

জোটের নেতারা আরও মনে করেন যে, নির্বাচন ও সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করাই ছিল ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে হত্যা এবং দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর ওপর হামলার উদ্দেশ্য।

জোটের নেতারা আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয় পরিদর্শন করেন। তারা মনে করেন, গতকাল এ দুই গণমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পেছনে ছিল একটি  'উগ্রবাদী গোষ্ঠী'। 

গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের মুখপাত্র এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন ,'সরকারের ছত্রছায়া না থাকলে কিংবা সরকারের যোগসাজশ না থাকলে এই হামলা এত সহজ হতো না।'

এ সময় জোটের সহযোগী এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম, এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, 'সরকারের ছত্রছায়া না থাকলে, সরকারের ভেতর থেকে যোগসাজশ বা যুক্ত না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো সহজ হতো না।'

'ফলে এসব হামলায় কারা জড়িত ছিল, তা সরকারকে চিহ্নিত করে জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে হবে,' বলেন তিনি।

'গতকালের হামলার ঘটনা আমাদের একটি ব্যর্থতা হয়ে থাকবে' উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, 'কারণ এই ঘটনাটা আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার ক্ষেত্রে নেতিবাচক।'

নাহিদ বলেন, 'আমাদের সামনে আগাতে হবে। আমরা মনে করি এখনো পরিস্থিতি অনুকূলে আসেনি। সারাদেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ ও শোকাহত। গতকাল রাতে যারা এ ধরনের কাজ (হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ) করেছে, যে হঠকারী উগ্রবাদী গোষ্ঠী, তারা ষড়যন্ত্রের চেষ্টায় আছে।'

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের মুখপাত্র নাহিদ আরও বলেন, 'আমরা রাজপথে থাকব, গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থাকবে, দাবি জানাব। কিন্তু কোনো গোষ্ঠী যেন আমাদের বিক্ষোভকে ব্যবহার করে নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থ কায়েম করতে না পারে এবং এমন কিছুর দিকে যেন আমাদের ঠেলে না দেয় যেন বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়—এই আহ্বান থাকবে জনগণের কাছে।'

আগামীকাল শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় সবাইকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব জানাজায় অংশ নেওয়া এবং শরিফ ওসমান হাদি যে বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন তা অব্যাহত রাখার শপথ নিতে হবে।'

'ওসমান হাদি একজন প্রার্থী ছিলেন একইসঙ্গে গণঅভ্যুত্থানের মুখ ছিলেন। তার নিরাপত্তা দিতে পারেনি সরকার। তাই নির্বাচনের পরিবেশ যেন সুষ্ঠু থাকে, সেজন্য রাজনৈতিক দল ও সরকারকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ নির্বাচন ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো গন্তব্য নেই। বিচার ও সংস্কারের অর্জন নিয়ে আমাদের নির্বাচনের দিকে যেতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

সরকারের জবাবদিহি দাবি করে গতকালের হামলায় সরকারের যারা যুক্ত ছিলেন বা নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম।

তিনি সরকারের প্রতি গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের ওপর হামলাকে 'পরিকল্পিত আক্রমণ' বলে মনে করেন।

তার মতে, জুলাই অভ্যুত্থানকে কলঙ্কিত করতে এ হামলা করা হয়েছে।

তিনিও এ ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করেন। হাসনাত কাইয়ুম বলেন, এটি সরকারের ছত্রছায়ায় হয়েছে আসন্ন নির্বাচন ব্যাহত করতে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সরকারের সমালোচনা করে বলেন, প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে সহিংসতা ও লুটপাট প্রশাসনিক ব্যর্থতার সুস্পষ্ট লক্ষণ।

তিনি বলেন, 'গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ, জুলাই যোদ্ধাদের হত্যার হুমকি, নারীদের প্রতি অসম্মান এবং প্রকাশ্য দিবালোকে ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড আইনশৃঙ্খলার অবনতির ইঙ্গিত।'

এ ধরনের হামলা, সহিংসতা ও লুটপাট প্রতিরোধে রাজনৈতিক দল ও সরকারকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Comments