জামায়াত-এনসিপি আসন সমঝোতা দু-এক দিনেই, নারী নেতাদের আপত্তি
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে দলের নারী নেতাদের একটি অংশ প্রকাশ্যে এমন সমঝোতার বিরোধিতা করছেন।
আগামী ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এর আগেই এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যে এই সমঝোতা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্যসচিব নুসরাত তাবাসসুম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও তাজনুভা জাবীনসহ দলের জ্যেষ্ঠ নারী নেতারা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিরোধিতা করছেন।
তাদের যুক্তি, এনসিপি ইতিমধ্যে নিজস্ব একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচিতি তৈরি করেছে। জামায়াতের সঙ্গে কোনো নির্বাচনী সমঝোতা হলে সেই স্বকীয়তা ম্লান হয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তা বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির এক নারী নেতা জানান, দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ শীর্ষ পাঁচ নেতা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে। তবে নারী নেতারাসহ প্রায় ৩০ জন এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি আরও জানান, জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে নারী নেতারা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল বিকেলে দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এনসিপির সঙ্গে তাদের 'ওয়ান টু ওয়ান' আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, আসন ভাগাভাগির সম্ভাবনা রয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমার আগেই এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ২০২৬ সালের আগে জামায়াত জোট গঠন করবে, নাকি আসন সমঝোতা বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করবে, তা তখন ঠিক করা হবে।
অন্যদিকে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন নির্দিষ্ট সময়সীমা না জানালেও বলেছেন, খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি দাবি করেন, জামায়াত ও বিএনপি—উভয় দলের সঙ্গেই আলোচনা চলছে, তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এনসিপি সূত্র জানায়, গত দুই মাস ধরে দলটি একাই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডের পর দলের অবস্থানে পরিবর্তন আসে। গত ১২ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিবিদ্ধ হন হাদী এবং ছয় দিন পর ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
হাদির মৃত্যুর পর এনসিপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। দলের নেতারা মনে করছেন, জাতীয় রাজনীতিতে এনসিপির অবস্থান সুসংহত করতে এখন বড় কোনো রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
বিএনপি এখনো সংস্কার এবং জুলাই সনদের গণভোট নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। এ কারণে এনসিপির কিছু নেতা এখন জামায়াতকে অধিক উপযুক্ত বিকল্প হিসেবে মনে করছেন।
সূত্র বলছে, যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি, তবে গত দুই দিনের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে অধিকাংশ সদস্য জামায়াতের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির পক্ষে মত দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গত বৃহস্পতিবার রাতের বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য জানান, কমিটির ৫০ সদস্যের মধ্যে ৪০ জন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, 'তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনজন সদস্য ছাড়া বাকি সবাই সমঝোতার পক্ষে ইতিবাচক সংকেত দিয়েছেন।'
ওই বৈঠকে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে আলোচনার শর্ত ও প্রক্রিয়া নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কৌশল পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করে ওই নেতা বলেন, বিএনপি জুলাই সনদের প্রতিশ্রুতি, বিশেষ করে রাষ্ট্র সংস্কার ও গণভোটের বিষয়গুলো থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি তাদের প্রার্থীদের জুলাই সনদ, সংস্কার বা গণভোটের পক্ষে প্রচার না চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে। এ ছাড়া এনসিপির সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতার আলোচনায়ও পিছিয়ে ছিল বিএনপি।
তবে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এনসিপির পক্ষ থেকে কোনো বৈঠক বা আলোচনার জন্য তাদের সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করা হয়নি।

Comments