তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে গতি ফিরেছে দলে, উজ্জীবিত বিএনপির নেতাকর্মীরা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরায় দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রমে আগের চেয়ে গতি ফিরেছে। নেতাকর্মীরাও আগের চেয়ে উজ্জীবিত। এই সুযোগকে নির্বাচনের মাঠে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।
দলটির বিশ্বাস, নির্বাচন ঘিরে যে অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি ছিল তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে তার অবসান হয়েছে।
দলের শীর্ষ নেতারা জানান, তারেক রহমানের আগমনে নেতাকর্মীরা নতুন করে উদ্দীপ্ত হয়েছেন এবং দেশজুড়ে দলীয় কার্যক্রমে নতুন গতি এসেছে।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, 'তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সব ধরনের সংশয় দূর হয়েছে। এখন নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ও প্রাণবন্ত। তার আগমন বিএনপিকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং দলকে নতুন উদ্যম দিয়েছে, যা নেতাকর্মীরা ধরে রাখতে চান।'
একই কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, তা বিএনপির জন্য ইতিবাচক।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এখন নেতাকর্মীরা বেশ সাবধান ও সচেতন। কারণ তারা এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে চান না, যা নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বা দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করতে পারে।
বিএনপি চায়, নির্বাচনী সময়কালে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকানো। যেন এগুলোর সুযোগ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো বিএনপিকে দুর্বল করতে না পারে।
দলীয় সূত্র জানায়, আগামী দিনগুলোতে বৈঠক, গণসংযোগ কর্মসূচি ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় কার্যক্রম বাড়ানো হবে, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে।
দলটির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রমে সক্রিয় থাকার পরিকল্পনা করেছেন। এর অংশ হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজ জেলা ঠাকুরগাঁও সফর করবেন। একই সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নিজ নিজ জেলায় গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
একাধিক তৃণমূল নেতা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে তারেক রহমানের নির্দেশনা পেয়েছেন। তবে নির্বাচনের আগে সরাসরি দেশে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন নেতাকর্মীরা।
মানিকগঞ্জ-১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এস এ জিন্নাহ কবির বলেন, 'গত ১৭ বছর ধরে বিএনপি সরকারের বাইরে আছে। তারেক রহমানের আগমনে দলের ভেতরের সব বিভাজন দূর হয়েছে। এখন তার নির্দেশনা মেনে আসন্ন নির্বাচন জেতাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।'
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় বিপুল জনসমাগম হয়েছিল। এটি দলের ভেতরে ঐক্য ও নতুন আত্মবিশ্বাসের জোরালো বার্তা দিয়েছে।
'দলের কর্মীরা তাদের নেতাকে ফিরে পেয়েছে, এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য নির্বাচন,' বলেন তিনি।
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ইউনিটের আহ্বায়ক এবং ঢাকা-১৬ আসনের দলীয় প্রার্থী আমিনুল হক বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে ঘিরে যে সাড়া পাওয়া গেছে, তা বিএনপির প্রতি জনগণের আগ্রহ বাড়ারই প্রমাণ।
দ্য ডেইলি স্টারকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, তারা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উদ্দীপ্ত।
অনেকেই বলছেন, দলের ভেতরের বর্তমান পরিবেশ আশাব্যঞ্জক।
একজন তৃণমূল কর্মী বলেন, 'আমরা উচ্ছ্বসিত, কিন্তু এটাও জানি সামনে অনেক কঠিন কাজ। শুধু স্লোগান নয়, আমাদের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দরকার।'
একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচনের আগে দলের জনসমাবেশ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা, অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সমালোচনার জবাব দেওয়ার দক্ষতাই জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্যরা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে দল আত্মবিশ্বাসী। দীর্ঘ সময় পর এবারই তারা নতুন উদ্যম ও সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনী সময়ে প্রবেশ করছে।
তবে তারা এটাও স্বীকার করেন যে, কেবল উত্তেজনা বা উদ্দীপনাই যথেষ্ট নয়।
দুইজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এই উদ্দীপনা কতটা নির্বাচনী সাফল্যে রূপ নিতে পারে, তা নির্ভর করবে দল কতটা কার্যকরভাবে এই উৎসাহকে সংগঠন ও ভোটে রূপান্তর করতে পারে তার ওপর।
দীর্ঘদিন ধরে তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করে ভার্চুয়াল বৈঠক ও নির্দেশনার মাধ্যমে দল পরিচালনা করে আসছিলেন। তৃণমূল নেতারা বলেন, তার প্রত্যাবর্তনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও স্থানীয় সংগঠকদের মধ্যে যে দূরত্ব ছিল, তা অনেকটাই কমে এসেছে।
গত এক বছরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিভিন্ন গ্রুপের সংঘর্ষ এবং কিছু নেতাকর্মীর অসদাচরণের অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছে বিএনপি। তবে শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, তারেক রহমানের উপস্থিতি আবারও সুসংগঠিত নেতৃত্ব কাঠামো প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
উত্তরাঞ্চলের এক বিএনপি সংগঠক বলেন, 'এখন কর্মীরা জানে, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরি নজর রাখছে। এতে সবাই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকবে।'
বিএনপির নেতারা আরও বলেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে যে সংশয় ছিল, তা অনেকটাই কেটে গেছে। আগে নেতৃত্বের ঘাটতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল, সেগুলো এখন অনেকাংশে নেই।
দলটি তাদের যোগাযোগ কৌশল আরও জোরদার করার পরিকল্পনা করছে। এর মূল লক্ষ্য হবে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, স্থানীয় পর্যায়ে বৈঠক এবং নীতিগত বিষয়ে আরও স্পষ্ট বার্তা দেওয়া।
দলীয় নেতারা জানান, এই কৌশল নির্ধারণে তারেক রহমানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, 'মানুষ তার কাছ থেকে সরাসরি শুনতে চায়। তারা জানতে চায়, তিনি কেমন নেতৃত্ব দিতে চান এবং দল কীভাবে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চায়।'
দলীয় সূত্রগুলো আরও জানায়, এ পর্যন্ত তারেক রহমান প্রকাশ্যে খুব সীমিত বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি মূলত প্রতীকী উপস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ বৈঠকে মনোযোগ দিয়েছেন। তবে আগামী দিনগুলোতে তার কাছ থেকে আরও স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।


Comments