এবার এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীনের পদত্যাগ

ছবি: সংগৃহীত

দলের প্রতি 'অবিশ্বাস ও অনাস্থা' জানিয়ে এবার পদত্যাগ করলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন।

আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি পদত্যাগের কারণ জানান এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন।

এর একদিন আগে গতকাল শনিবার দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তাজনূভা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন তার পোস্টে।

তাজনূভা তার পোস্টে লেখেন, 'আপনারা অনেকে ভাবছেন, হয়তো জামায়াতের সাথে জোটে ঐতিহাসিক কারণ বা নারী বিষয়ের কারণে আমার আপত্তি। এর চেয়েও ভয়ঙ্কর যে কারণ, সেটা হল যে প্রক্রিয়ায় এটা হয়েছে। এটাকে রাজনৈতিক কৌশল, নির্বাচনী জোট ইত্যাদি লেভেল দেয়া হচ্ছে। আমি বলব এটা পরিকল্পিত। এটাকে সাজিয়ে এ পর্যন্ত আনা হয়েছে।'

তিনি অভিযোগ করেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রার্থীদের মনোনয়ন ও আসন সমঝোতার মাধ্যমে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সুযোগও সীমিত করেছে। তবে তিনি দল তেকে পদত্যাগ করলেও এই মুহূর্তে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন না বলে পোস্টে জানান।

তাজনূভা বলেন, 'এনসিপি শুরু থেকে যে গণপরিষদ, সেকেন্ড রিপাবলিক মধ‍্যপন্থার, নারী, বিভিন্ন জাতিসত্তাকে নিয়ে রাজনীতি করার কথা বলছে সেটা ধারণ করে যে কয়জন পার্টিতে ছিল, তাদের মধ্যে আমি একজন। এই পার্টির একজন ফাউন্ডার মেম্বার আমি।'

তবে এতকিছুর পরও এই দল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া তার সামনে আর কোনো 'সম্মানজনক অপশন' নেই বলে দাবি করেন তিনি।

নাম উল্লেখ না করে পোস্টের এক জায়গায় তিনি বলেন, 'এক শীর্ষ নেতা আরেক শীর্ষ নেতার সাথে যে মাইনাসের রাজনীতি করে, ওখানে সেটা ভয়ঙ্কর। এরা নিজেদের মধ্যে রাজনীতি করতে এতো ব‍্যস্ত, এরা কখনো দেশের জন‍্য নতুন একটা মধ‍্যপন্থার বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি করতে পারবে না।'

২৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণাপত্র থেকে শুরু করে সবশেষ ডেইলি স্টারের ডিবেটে বলা কথা শীর্ষ নেতারা কতটুকু ধারণ করে সময়মতো মিলিয়ে নিতেও বলেন এই নেত্রী।

জামায়াতের সঙ্গে জোট করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এনসিপি স্বতন্ত্র স্বকীয়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে যে কারো সাথে রাজনৈতিক জোটে অসুবিধা ছিল না। সেটা ৫ বছর পরে হতো, ঠিক প্রথম নির্বাচনেই কেন? কিন্তু আর সব অপশনকে ধীরে ধীরে রাজনীতি করে বাদ দেয়া হয়েছে যাতে জামায়াতের সাথে জোট ছাড়া কোনো উপায় না থাকে। এটা কোনো রাজনৈতিক কৌশল না, এটাই পরিকল্পনা।'

দলের নেতারা পুরো জুলাইকে নিয়ে রাজনৈতিক কৌশলের নাম করে তুলে দিচ্ছে জামায়াতের হাতে—এমন অভিযোগ করে তাজনূভা বলেন, 'যেখানে এনসিপিকে বলাই হয় জামায়াতের আরেকটা দোকান, তাহলে কেন এনসিপি আগে নিজের স্বকীয়তা, নিজের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা না করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন‍্য জামায়াতকে বেছে নিতে মরিয়া হয়ে যাচ্ছে?'

তাজনূভা জানান, জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর পদত্যাগ করার কথা ভাবলেও গতকাল সবাই নিশ্চিত করেছে এই জোটে সিল পড়েছে। তাই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমার পদত্যাগের কারণ যতটা না জোট, তারচেয়ে বেশি যে প্রক্রিয়ায় জোট হয়েছে। অবিশ্বাস, অনাস্থা মূল কারণ। দল অনেক বড় হয়ে স্টাবলিশ করতে পারলে অনেক কিছু বিবেচনা করে ছাড় দেয়া যেত, কিন্তু গঠনের শুরুটাই নাকি আগে সংসদে যেতে হবে। তারপর ওই যে কজন এমপি বের হবে, তাদেরকে কেন্দ্র করে নাকি সংগঠন বড় হবে।'

জামাতের সাথে জোট না চাওয়া মানে বিএনপির সাথে চাওয়া না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তাজনূভা বলেন, 'আমার রাজনীতিই সংস্কারের পক্ষে। নতুন সংবিধানের পক্ষে। আমি চেয়েছিলাম স্বতন্ত্র একটা নির্বাচন হোক, তৃতীয় জোট করে, বিএনপি/জামাতের বাইরে গিয়ে।'

তাসনিম জারার মতো এই নেত্রীও সমর্থকদের পাঠানো ডোনেশন ফেরত দেবেন বলে জনান। তবে তাকে একটু সময় দেওয়ার অনুরোধ করেন।  

জুলাইয়ে তার রাজপথে নামা ছিল পরিবর্তনের লক্ষ্যে, নতুন কিছুর জন‍্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি মধ‍্যপন্থার বাংলাদেশপন্থী নয়া বন্দোবস্তের রাজনীতির খালি পড়ে থাকা জায়গা পূরণ করার চেষ্টায় থাকবেন বলে জানান।

 

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

2h ago