খালেদা জিয়ার প্রয়াণে বিশ্বনেতাদের শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যু
খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, বিদেশি সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শোক প্রকাশ করেছে। তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে শ্রদ্ধার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতি সংহতিও জানিয়েছেন তারা।

আজ মঙ্গলবার ভোর ছয়টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

জাতিসংঘ

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ (ইউএন)। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।

জাতিসংঘের শোকবার্তায় বলা হয়, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাতিসংঘ গভীর শোক প্রকাশ করছে।'

বার্তায় আরও বলা হয়, 'এই শোকের সময়ে জাতিসংঘ সম্মানিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি তার সংহতি পুনর্ব্যক্ত করছে।'

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

শোকবার্তায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, 'বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।'

বিমসটেক

আঞ্চলিক সংস্থা বিমসটেকও শোক প্রকাশ করেছে।

বিমসটেক সচিবালয় জানিয়েছে, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। তার আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক।'

যুক্তরাষ্ট্র 

বাংলাদেশের আধুনিক ইতিহাস গঠনে খালেদা জিয়ার অবদানের কথা স্বীকার করে শোক প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। 

বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাস এক শোকবার্তায় জানিয়েছে, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র গভীর শোক প্রকাশ করছে। বেগম জিয়া বাংলাদেশের আধুনিক ইতিহাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং তার নেতৃত্ব বাংলাদেশের উন্নয়ন এগিয়ে নিতে সহায়ক ছিল।'

রাশিয়া

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তার সময়ে দ্বিপাক্ষিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকার কথা স্মরণ করেছে রাশিয়া।

বাংলাদেশে রাশিয়ার দূতাবাস শোকবার্তায় জানায়, 'তিনবার সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমাদের দেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য রাশিয়া তাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে।'

চীন

চীনও বেগম জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ ও বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, 'চীনের জনগণ তাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।'

তিনি আরও বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই যথাক্রমে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের কাছে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন।

ভারত

ভারতও বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, 'ঢাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদে আমি গভীরভাবে শোকাহত।'

তিনি আরও বলেন, 'তার পরিবার ও বাংলাদেশের সকল মানুষের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তার ও পরিবারের সকলকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দিন। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার অবদান এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে তার ভূমিকা সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।'

মোদি স্মৃতিচারণ করে বলেন, '২০১৫ সালে ঢাকায় তার সঙ্গে আমার উষ্ণ সাক্ষাতের কথা মনে পড়ে। আমরা আশা করি তার দৃষ্টিভঙ্গি ও উত্তরাধিকার আমাদের অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।'

বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার শান্তি কামনা করেন মোদি।  

পাকিস্তান

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিও শোক প্রকাশ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, 'বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তার আজীবন সেবা এক স্থায়ী উত্তরাধিকার হয়ে থাকবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বেগম জিয়া পাকিস্তানের এক নিবেদিত বন্ধু ছিলেন। এই শোকের সময়ে আমার সরকার এবং পাকিস্তানের জনগণ বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের চিন্তা ও প্রার্থনা তার পরিবার, বন্ধু এবং বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আছে। আল্লাহ তার আত্মাকে শান্তি দিন। আমিন।'

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি বলেন, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তার পরিবার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। তার নেতৃত্ব ও সেবা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।'

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যও বেগম জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।'

দূতাবাস আরও জানায়, 'তার পরিবার, বন্ধু এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।'

জাপান

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে বেগম জিয়ার ভূমিকার কথা স্মরণ করেছে জাপান।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি বলেন, 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সম্মানিত চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুসংবাদে আমরা গভীর শোকাহত।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বেগম খালেদা জিয়া দুবার জাপান সফর করেছেন এবং দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।'

জার্মানি

জার্মানি তার দীর্ঘ জনসেবা ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে সম্মান জানিয়েছে।

বাংলাদেশের জার্মান দূতাবাস জানায়, 'বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দেশের প্রথম নারী সরকারপ্রধান, সাবেক ফার্স্ট লেডি এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) দীর্ঘদিনের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি।'

তার দীর্ঘ যাপিত জীবনে বেগম জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন উল্লেখ করে জার্মানি আরও জানিয়েছে, '২০০৪ সালে ঢাকায় জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোশকা ফিশারের সফর এবং ২০১১ সালে জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান উলফের সফরে তার সঙ্গে বৈঠকের কথা আমরা স্মরণ করছি।'

বার্তায় বলা হয়েছে, 'জার্মানি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার আত্মা শান্তিতে থাকুক।'

ফ্রান্স

শোকবার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার জাতীয় অবদানকে তুলে ধরেছে ফ্রান্স।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি দূতাবাস জানিয়েছে, 'বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের প্রথম নারী সরকারপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি।'

দূতাবাস জানায়, এই শোকের সময়ে আমরা তার পরিবার, দল এবং বাংলাদেশের জনগণের পাশে রয়েছি।  তার উত্তরাধিকার স্মরণীয় হয়ে থাকবে।'

ইরান

ইরানের ঢাকাস্থ দূতাবাস বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতৃত্ব ও সদস্যদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে।

এক শোকবার্তায় দূতাবাসটি বেগম খালেদা জিয়াকে একজন প্রখ্যাত জাতীয় নেত্রী হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, 'তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং তার রাজনৈতিক জীবনে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও জনজীবনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।'

দূতাবাসটি আরও জানায়, 'খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গঠনমূলক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল।'

অস্ট্রেলিয়া

শোক প্রকাশ করে অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের সমবেদনা।'

এছাড়া, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি লিখেছেন, 'বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অন্যতম প্রখ্যাত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তার শোকসন্তপ্ত পরিবার, বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের প্রতি আমি সমবেদনা জানাই।'

Comments