‘কত টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পারবেন? পারলে ভাইকে ফিরায়ে দেন’

নিহত মামুন মাদবর। ছবি: সংগৃহীত

'খবর নিয়া কী করবেন? কত টাকার ক্ষতিপূরণ আমাদের দিতে পারবেন আপনারা? পারলে আমার ভাইকে ফিরায়ে দেন।'

কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় গত ১৮ জুলাই রাতে রামপুরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মামুন মাদবরের বড়ভাই রুবেল মাদবর।

তিতুমীর কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন মামুন। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর সদরের চর চিকন্দি গ্রামে। ১৯ জুলাই বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ বাবাকে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল তার। অথচ বাড়ি ফিরল মামুনের বুলেটবিদ্ধ লাশ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যখন ঢাকাসহ সারাদেশ উত্তপ্ত, তখন ১৮ জুলাই রাত ১২টার দিকে রামপুরার ওয়াপদা রোডে বাসার সামনের গলিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হন মামুন। পরদিন ১৯ জুলাই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ওই রাতেই নিজ বাড়িতে নিয়ে তার দাফন সম্পন্ন হয়। 

আজ মঙ্গলবার মামুনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। আরও জানা যায়, চর চিকন্দি গ্রামের আব্দুল গনি মাদবরের ছেলে মামুন ছিলেন চার ভাইয়ের মধ্যে ছোট। দুইভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করেন। আরেক ভাই কিছুদিন আগে সৌদি আরব গেছেন। মামুন রামপুরার ওমর আলী লেন এলাকার একটি বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওমর আলী লেনের এক বাসিন্দা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '১৮ জুলাই রাতে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়। তাই আমি, মামুন ও আমাদের কয়েকজন বন্ধু মিলে রাত ১২টার দিকে রাস্তায় হাঁটতে বের হই। কিছুক্ষণ পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি এসে গলির দিকে গুলি চালায়। দৌড়ে পালানোর সময় একটি গুলি মামুনের মাথার পেছনে বিদ্ধ হয়। এরপর আমরা তাকে উদ্ধার করে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে যাই ও তার পরিবারকে জানাই।'

মামুনের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মামুনের বাবা গণি মাদবর পেশায় কৃষক। এসএসসি পর্যন্ত মামুন কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৬ সালে এসএসসি ও ২০১৮ সালে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকার তিতুমীর কলেজে  রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন। স্নাতক  শেষ করে ২০২৩-২৪ সেশনে একই বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন।

মামুনের বড়ভাই  রুবেল মাদবর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার পড়াশোনা করা হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম মামুন পড়াশোনা করে অনেক বড় হোক। 

তার পড়াশোনার জন্য আমাদের কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয়নি। ফ্রিল্যান্সিং করে নিজেই ায় করত। বাড়িতেও টাকা পাঠাতো, এমনকি বাবা-মায়ের ওষুধের খরচও দিত। ১৯ তারিখ বাড়িতে এসে বাবাকে  ডাক্তার দেখাবে বলেছিল। কিন্তু তার আগের রাতে ওর রুমমেটরা আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, মামুনের গুলি লেগেছে, হাসপাতালে  নিয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের শুক্রবার বাড়িতে আসার কথা, এলো ঠিকই, তবে লাশ হয়ে।'

মামুনের শোকে বাবা গনি মিয়া বিছানা থেকেই আর উঠছেন না। মা সারাদিন বারান্দায় বসে কাঁদছেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় শৌলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুনেছি মামুন ঢাকায় গুলিতে মারা গেছেন। বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Former president Hamid airport CCTV footage

The story of Hamid’s exit

Security footage obtained and analysed by The Daily Star shows that Hamid's car reached the barrier gate of the VIP terminal at 12:46am on May 8

11h ago