জাকসু সচল রাখা ও শিক্ষকদের সিন্ডিকেট ভাঙাই আমার প্রধান লক্ষ্য: তৌহিদ সিয়াম

আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি বলে মনে করছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম।
দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে 'শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম' প্যানেলের এই প্রার্থী বলেন, 'দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আমার প্রথম কাজ হবে নিয়মিত জাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাকসু চালু রাখা অত্যন্ত জরুরি।'
'এটা এ কারণে দরকার কারণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প কয়েকজন শিক্ষকের একটা সিন্ডিকেট আছে যারা আসলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্ষমতার পার্থক্য কমিয়ে একটা ভারসাম্য আনতে চাই,' বলেন সিয়াম।
এই জিএস প্রার্থী বলেন, 'আমার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার মধ্যে নির্বাচন কখনোই মুখ্য ছিল না। বরং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকেই এবার সামনে আসা। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন, পরিবেশ রক্ষা ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান—সব ক্ষেত্রেই সক্রিয় ছিলাম। এই অভিজ্ঞতাই আমাকে বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তব সংকট ও সম্ভাবনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেছে।'
নিজেদের প্যানেলের বর্ণনা দিয়ে বাগছাস নেতা সিয়াম বলেন, 'আমাদের ২৫ জনের প্যানেলে নারীদের ৬ সংরক্ষিত পদ ছাড়াও বেশ কয়েকটি পদে নারীদের প্রার্থী দিয়েছি, আদিবাসী প্রার্থী আছেন। পাশাপাশি সংগঠনের বাইরের কয়েকজনকেও আমরা প্যানেলে এনেছি।'
জয়ী হলে কী করবেন জানতে চাইলে এই জিএস প্রার্থী বলেন, 'এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা আসলে বলে শেষ করা যায় না। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝি সব সমস্যার মূলে শিক্ষক সিন্ডিকেট। তাদের কারণে প্রশাসনিক কাজের অটোমেশন আটকে আছে, খাবারের মান উন্নত হচ্ছে না, ছাত্র রাজনীতি দুর্বৃত্তায়নের দিকে গেছে। আবাসনের স্বচ্ছতা কিংবা নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই তাদের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট। আমার লক্ষ্য এই শিক্ষক সিন্ডিকেটকে জোরেশোরে একটা ধাক্কা দেওয়া।'
এটা করতে পারলে আমি মনে করি বিভিন্ন সম্পাদকের পদে যারা যেসব ইশতেহার দিয়েছেন, সেগুলো সহজে বাস্তবায়ন করতে পারবেন,' যোগ করেন তিনি।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়েও সন্তুষ্ট নন তৌহিদ সিয়াম। আচরণবিধি কঠোর করায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 'আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা বিতর্ক আয়োজন করতে পারছি না। ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি না। এতে নির্বাচনের আমেজ তৈরি হচ্ছে না,' বলেন তিনি।
তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'নতুন নতুন নেতৃত্ব উঠে আসতে দেখছি। এটাকে ইতিবাচক বলতে হবে। যিনিই জিতে আসবেন, তিনি অবশ্যই ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির অংশই হবেন। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সঠিক মানুষকেই বেছে নেবেন, সেটা আমাকেই নিক বা অন্য কেউ জয়ী হোক।'
'তবে আমি তো অভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে আসিনি। অনেক আগে থেকেই প্রশাসন ও বিগত ফ্যাসিস্টদের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছি। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গত বছরের ৫ আগস্টের পর সারা দেশে সমন্বয়ক ও অভ্যুত্থানের নেতাদের আর্থিকসহ বিভিন্ন ধরনের নৈতিক স্খলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক বা অভ্যুত্থানের নেতাদের ইমেজ এখনো ক্লিন আছে এবং আমিও তাদের একজন। তাই আমি মনে করি আমার ওপর শিক্ষার্থীরা ভরসা রাখছেন,' বলেন তিনি।
Comments