ভাগনার বিদ্রোহের ১ বছরে পুতিনের ক্ষমতা আরও বেড়েছে

সম্প্রতি ভিয়েতনাম সফর করেন পুতিন। ছবি: রয়টার্স
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স

গত বছর ভাড়াটে সেনার দল ভাগনার তাদের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের নেতৃত্বে মস্কোর দিকে বিপুল বিক্রমে এগিয়ে আসছিলেন। পশ্চিমা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়, 'থরথর' করে কাঁপছেন পুতিন। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই বিদ্রোহের অবসান ঘটে।

আগামী ২৩ জুন ভাগনার বিদ্রোহের এক বছর পূর্তি। সে উপলক্ষে বার্তা সংস্থা এএফপি আজ শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

গত বছর প্রিগোশিনের এই উদ্যোগকে এর আগের ২৫ বছরের মধ্যে পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল। তবে এক বছর পর বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রেমলিনের নেতার ক্ষমতা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সুরক্ষিত।

বিদ্রোহের দুই মাস পর রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রিগোশিন।

বিদ্রোহের সময় ভাগনারের সেনারা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ-অন-ডনে অবস্থিত রুশ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের দখল নেয়। তারা অন্তত একটি সামরিক উড়োজাহাজ গুলি করে ভূপাতিত করে এবং রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হয়। তবে মাঝপথেই বেলারুশের মধ্যস্থতায় এই ২৪ ঘণ্টাব্যাপী বিদ্রোহের অবসান ঘটে।

প্রিগোশিনের সঙ্গে পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
প্রিগোশিনের সঙ্গে পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনার পর পুতিন নতুন আইন চালু করেন। কোনো আধা-সামরিক বাহিনীকে ভাগনারের মতো স্বায়ত্তশাসন সুযোগ আর কখনোই দেওয়া হবে না—জানান রুশ নেতা।

চাথাম হাউস নামের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণী সংস্থার ফেলো নিকোলাই পেত্রভ বলেন, 'প্রিগোশিনের উত্থানের আগে আমাদের হাতে এমন কোনো নজির ছিল না যেখানে একটি শক্তিশালী সামরিক ইউনিটের কমান্ডারের একইসঙ্গে আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং গণমাধ্যমে ওপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রয়েছে '

পুতিন প্রিজোশিনকে এই তিন ধরনের সুবিধাই দেন। এর পেছনে শুধু দুইজনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বই নয়, বরং ইউক্রেনে রাশিয়ার স্থলবাহিনীকে যাতে ভাগনারের সেনারা সহায়তা দিতে পারে, সে উদ্দেশ্যও ছিল।

পেত্রভ জানান, প্রিগোশিনকে ক্ষমতাবান করে তোলার বিষয়টিকে বড় ভুল হিসেবে দেখেন পুতিন। সে কারণে তিনি এখন কাউকে এ ধরনের কোনো পদে বসানোর আগে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও আনুগত্যের দিকে নজর দেন।

পেত্রভ মন্তব্য করেন, 'এখন সবাই পুতিনের প্রতি অনুগত' এবং তিনি 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের ওপর সার্বক্ষণিক ও সরাসরি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার দিকে জোর দেন।'

সম্প্রতি পুতিন রুশ সামরিক বাহিনীতে বড় আকারে রদবদল করেছেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে তার পদ থেকে সরানো হয়েছে। এ ছাড়াও, আরও বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উত্তর কোরিয়া সফরে পুতিন। ছবি: রয়টার্স
উত্তর কোরিয়া সফরে পুতিন। ছবি: রয়টার্স

এছাড়া তিনি টেকনোক্র্যাট অর্থনীতিবিদ আন্দ্রেই বেলুসভকে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, যাতে সামরিক বাহিনীর 'কোনো প্রভাবশালী' নেতা সেনাবাহিনীর স্বার্থকে অন্য যেকোনো বিষয়ের ঊর্ধ্বে রাখতে না পারেন। এমনটাই বলেছেন পেত্রভ।

প্রিগোশিন প্রতিরক্ষাবাহিনীর প্রধানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কৌশলী হতে না পারার ও ইউক্রেনের আগ্রাসনকে জয়ে রুপান্তর করতে না পারার ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছিলেন। সে সময় পুতিন তার নেতাদের সুরক্ষা দিলেও এখন আর তা দিচ্ছেন না।

ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো নাইজেল গৌল্ড-ডেভিস বলেন, 'পুতিন প্রমাণ করেছেন, তিনি চাইলেই এখন সেনাবাহিনীতে যেকোনো ধরনের রদবদল করতে পারেন, যা তার দুর্বলতা নয়, বরং শক্তিমত্তার প্রমাণ।'

সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও তিনি তার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। ৮৭ শতাংশ ভোটে জয়ী হন তিনি।

নাইজেল ডেভিস বলেন, 'এই ভোটে প্রমাণ হয়েছে, পুতিন যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন এবং দেশের জনগণকে তা মেনে নিতে হবে।'

রেড স্কয়ারের মঞ্চ থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অবসরপ্রাপ্ত সেনা ও অন্যান্য অতিথিরা মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন। ছবি: রয়টার্স

পেত্রভ এএফপিকে বলেন, 'পুতিনের জনপ্রিয়তা যুদ্ধের আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি—সেটা তিনি এই ভোটের মাধ্যমে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন।'

তবে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পেত্রভ। এই নির্বাচনে পুতিন-বিরোধীরা লড়ার সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। 

তবে নাইজেল ডেভিস জানান, পুতিন বা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তার বিশেষ সামরিক অভিযান নিয়ে বেশিরভাগ রুশ নাগরিকের মধ্যে উৎসাহ নেই।

'বেশিরভাগ মানুষ মাথা নিচু করে রাখতে আগ্রহী। তারা যুদ্ধ ও শাসকগোষ্ঠীর থেকে দূরে থাকতে চান', যোগ করেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English
foreign travel rules for government officials Bangladesh

Advisers, secretaries flouting foreign travel rules

CA upset over repeated violations; officials urged to follow directives ahead of election

1h ago