আলাস্কায় পর্বতের মুসিক প্রসব?

ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিন,
আলাস্কার রাজধানী অ্যাংকোরেজের এলমেনডোর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্বাগত জানাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এপি

যখন দুই শীর্ষ পরাশক্তি দেশের মহাশক্তিধর রাষ্ট্রনায়করা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক করেন তখন বিশ্ববাসীর প্রত্যাশার পারদ স্বভাবতই অনেক ওপরে থাকে। আর যখন এ ধরনের কোনো সম্মেলন থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায় না তখন তা বাংলা প্রবাদ 'পর্বতের মুসিক প্রসব'র মতোই শোনায়।

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বহুল প্রত্যাশিত বৈঠক থেকে যা এসেছে তা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের অনেক বাসিন্দার কাছে 'অপমান'।

গতকাল রোববার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়—'রুশ হামলা থেকে পালানো ইউক্রেনীয়রা বলছেন এই সম্মেলন একটা অপমান'।

যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো ইউক্রেনীয়দের একজন ভ্যালেন্টিনা শেভচেঙ্কো (৬৯)। তিনি ২১ বছর যে জায়গায় থাকতেন সেই জায়গা থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন সাম্প্রতিক রুশ হামলার কারণে। আলাস্কার সম্মেলন নিয়ে খ্যাপা তিনি। নিউইয়র্ক টাইমসকে ভ্যালেন্টিনা বলেন, 'ভিন্ন দুই দেশের প্রেসিডেন্ট আমাদেরকে বাদ দিয়েই আমাদেরই ভাগ্য ঠিক করতে আলোচনা করছেন। এটা মোটেও উচিত হলো না।'

গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায়ে যুদ্ধাপরাধী প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিয়ে আলাস্কার রাজধানী অ্যাংকোরেজের এলমেনডোর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে আলোচনায় বসেন। যে মানুষটির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে সেই মানুষটিকে ট্রাম্প আনলেন বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে। ট্রাম্পের দেওয়া লালগালিচা ও উষ্ণ অভ্যর্থনায় সিক্ত হন পুতিন। বি-টু বোমারু বিমান উড়ে যাওয়া ও লিমোজিনে দুই নেতার একান্ত আলোচনা নিয়েও চর্চা হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

কিন্তু, ২০২২ সালে আচমকা ইউক্রেন আক্রমণের পর বিশ্বমঞ্চ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন পুতিন কোনো শান্তির আভাস দিলেন কি? অথচ, দুই নেতাই দাবি করলেন—বৈঠক 'সফল' হয়েছে। জানালেন, আলোচনা হয়েছে 'ফলপ্রসূ'।

অথচ, যুদ্ধ বন্ধের কোনো আভাসই মিলল না দুই মহা-প্রভাবশালী রাষ্ট্রপতির ইঙ্গিতে-আভাসে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমের মিত্র দেশগুলোর কাছে 'প্রত্যাখ্যাত' পুতিনের জয় হলো কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে।

পরে জানা গেল—ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর দখলে থাকা ভূমির বিনিময়ে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা চলছে। এমন 'চাপিয়ে দেওয়া শান্তি' পূর্ব ইউরোপে নতুন করে অশান্তি তৈরির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে না তো?

দেখা হবে মস্কোয়?

আলাস্কায় দুই নেতার বৈঠকের দুই দিন পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেল—ট্রাম্প বলছেন ভলোদিমির জেলেনস্কিই পারেন যুদ্ধ শেষ করতে। শুধু তাই নয় তিনি চাইলে 'এখনই' যুদ্ধ শেষ করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

আগামীকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকের প্রাক্কালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমনটিই জানালেন। আরও জানালেন যে রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়া উপদ্বীপের পাশাপাশি ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার আশা ইউক্রেনকে বাদ দিতে হবে। আর তাহলেই আসবে 'শান্তি'।

গত শুক্রবারের বৈঠকে ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে রাজি হন পুতিন। সেখানে 'ভূমি বিনিময়'কে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ধারণা দেওয়া হয়।

আজ সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বসবেন জেলেনস্কি। পুরো প্রক্রিয়াটিকে 'শান্তি প্রচেষ্টা'র উদ্যোগ হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু, এর মধ্যেও রুশ হামলা থেমে নেই।

আজ সিএনএন জানায়, ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়ায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রাশিয়া। হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত তিন জন। আহত হয়েছেন আরও ১৮ জন।

মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ট্রাম্প এখন যুদ্ধবিরতির কথা না বিবেচনায় না নিয়ে সরাসরি শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়াও, রাশিয়ার ওপর নতুন অবরোধ আরোপের হুমকি থেকেও সরে এসেছেন তিনি।

গতকাল রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির এক প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়, জেলেনস্কি ট্রাম্পের শান্তি চুক্তি চেষ্টা প্রত্যাখান করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মনে করছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত শেষ করতে প্রয়োজন যুদ্ধবিরতির।

এসব হচ্ছে বৈঠক-পরবর্তী বাস্তবতা। আবার ফিরে আসা যাক আলাস্কা সম্মেলনে।

সেদিন সাবলীল ভঙ্গি ও সহজ ভাষায় বিশ্ববাসীকে অপেক্ষার দীর্ঘপথে ঠেলে দিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ঠেলে দিলেন অনিশ্চয়তায় অন্ধ পথেও। কোনো অনুবাদকের সহায়তা না নিয়েই জার্মান-জানা পুতিন স্পষ্ট ইংরেজিতে বললেন—'নেক্সট টাইম ইন মস্কো'। তিনি ইংরেজিতে 'থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ' বলে বৈঠক শেষ করেন। অর্থাৎ, কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয় বহুল-প্রত্যাশিত রুশ-মার্কিন সম্মেলন।

প্রশ্ন জাগছে—দুই বিশ্বনেতার শীর্ষ সম্মেলন থেকে প্রাপ্তি কী? আলাস্কায় কি দেখা গেল পর্বতের মুসিক প্রসব?

Comments

The Daily Star  | English
Election Commission has proposed stricter amendments to the election law

Fugitives can’t run in national elections

The Election Commission has proposed stricter amendments to the election law, including a provision barring fugitives from contesting national polls.

10h ago