বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্ট

লালিত স্বপ্ন পূরণ করে নতুন তকমার খোঁজে ফিলিপস

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সিলেট টেস্ট দিয়েই বাংলাদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার খেলতে নামলেন গ্লেন ফিলিপস। তবে বাংলাদেশে এটিই তার প্রথম সফর নয়। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলেন। ফতুল্লায় আয়ারল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাথে একটি ম্যাচে যদি ফিরে তাকান, দেখতে পাবেন নিউজিল্যান্ডের উইকেটরক্ষকের নামটা গ্লেন ফিলিপস!

মঙ্গলবার সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে পড়া ৯ উইকেটের ৪টিই নিয়ে ফেলেছেন যে ফিলিপস, উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবেই পরিচিতি ছিল তার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যদিও সে ভূমিকায় নিয়মিত নন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিলিপস মানে তাই- ব্যাটিংয়ের সাথে যিনি হাতটাও ঘোরাতে পারেন। তিন সংস্করণে প্রথম যে ৮০ ম্যাচ খেলেছেন, তাতে বোলিং করতে পেরেছেন মাত্র ১৪ বার। সব মিলিয়ে তাতে ৩৪.৩ ওভারের বেশি বল করতেও পারেননি এই অফ স্পিনার।

ভারত বিশ্বকাপের আগে আগে ফিলিপসের বোলিং দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলে কিউইরা, সেই থেকে সিলেট টেস্ট পর্যন্ত সবকটি ম্যাচেই হাত ঘুরিয়েছেন তিনি। ১৫ ম্যাচ খেলে ৭৩ ওভার বোলিং করেছেন। বিশ্বকাপে নিজের স্পিনে দক্ষতা দেখিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত এই সিরিজের স্কোয়াডে। ধীরে ধীরে পার্ট-টাইমারের ট্যাগও মুছে দেওয়ার চেষ্টায় আছেন।

অলরাউন্ডাররের ট্যাগটাই তো ফিলিপস লাগাতে চান তার গায়ে। প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সে আশার কথাই শোনান, 'আমি উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের ট্যাগটা আমার গা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টায় আছি অনেক দিন ধরেই। আশা করি, এই ৪ উইকেট সেক্ষেত্রে কাজে আসবে। বেশ কয়েক বছর ধরেই আমি বোলিং নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছি, এই লক্ষ্য মাথায় রেখেই। আমি এটাও অনুভব করেছি যে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে হলে আমাকে বল হাতেও কিছু দিতে হবে। আমাদের ব্যাটিং লাইনআপ বেশ শক্তিশালী। এই সুযোগটা পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল কারণ ছিল ওই অলরাউন্ডারের ভূমিকা পালন করতে পারাই।'

মর্যাদার টেস্ট ক্রিকেটে পা রেখে টেস্ট ক্রিকেটার তকমা গায়ে জড়াতে চান না কোন ক্রিকেটার! আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের গুণেই বিশ্ব ক্রিকেটে পরিচিতি পাওয়া ফিলিপসের স্বপ্নের যে ঘর, তাতে জায়গা ছিল সাদা পোশাকে বোলিংয়েরও, 'হ্যাঁ, অবশ্যই, টেস্ট ম্যাচের মতো জায়গায় বোলিং করার সুযোগ পাওয়াটা আমার জন্য স্বপ্ন ছিল অনেক দিন ধরেই। কম্বিনেশন ও বাংলাদেশের (একাদশে) বাঁহাতির আধিক্য থাকাটা সুযোগ দিয়েছে।'

বাংলাদেশের বিপক্ষে চলমান টেস্টটি তার দ্বিতীয়। এর আগে একটিমাত্র যে টেস্টে খেলেছেন, সেটিতে বোলিংয়ের সুযোগ পাননি। এবার সিলেটে প্রথম টেস্ট উইকেট তো পেলেনই, চমক জাগানিয়া হলেও সত্য যে দ্বিতীয় দিনে তাকে হাতছানি দিচ্ছে প্রথম ফাইফারও। সংবাদ সম্মেলনে যেভাবে টেস্টে বোলিং নিয়ে স্বপ্নের কথা শোনান, ৫ উইকেট নিলে সেটি যে তার জীবনের অনেক বড় স্মরণীয় কিছু হবে, তা আন্দাজ করা যায় অনায়াসেই। বাংলাদেশে এসে টেস্টে তার বোলিংয়ের অভিষেকও যে হলো! এর আগে ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে এদেশে এসেছিলেন যখন, ব্যাট হাতেই শুধু অবদান রেখেছিলেন। ৬ ম্যাচে রান করেছিলেন ১৮০।

২০২৩ সালে আরেকবার বাংলাদেশে যখন এসেছেন ফিলিপস, ভিন্ন এক রূপেই দেখা দিলেন। যার মনে লালিত লাল বলে বোলিংয়ের স্বপ্ন। ডানহাতি এই বিধ্বংসী ব্যাটার যে টেস্টে তার প্রথম উইকেট নিয়েও স্বপ্ন কম দেখেননি, 'আমি লম্বা সময় ধরে আমার প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বপ্ন দেখে এসেছি। কিন্তু যেভাবে পেলাম, সেভাবে পাব বলে ভাবিনি আমি।'

বিস্ময়করভাবে প্রথম উইকেটটা পেয়ে যান ফুলটস বলে। নাজমুল হাসান শান্ত তার লোপ্পা বলে ক্যাচ দিয়ে যেন উপহারই দেন। এভাবে উইকেট পাবেন, সেটা ফিলিপস ভাবেননি কখনো। তার কৃতিত্ব নেই এমন বলে উইকেট পাওয়ায় কিঞ্চিৎ আফসোস থাকলেও তা কেটে যায় পরের উইকেটগুলোতে। সে কথাই বলেন ফিলিপস, 'আপনি লেগ স্পিনারদের দেখুন, কখনো একেবারে অসাধারণ ডেলিভারি করে এবং এরপর একেবারে লোপ্পা ফুল টস করে ফেলে। তা দেখে ব্যাটারদের চোখ জ্বলজ্বলে হয়ে ওঠে এবং শেষমেশ এটা সোজা ফিল্ডারের হাতে চলে যায়। আমি ওই রকম সহজ উইকেট সব সময় চাইতাম, কিন্তু আমি কখনো আমার প্রথম টেস্ট উইকেট সেরকমভাবে চাইনি। হয়তো সেটা অদলবদল করা যায় পরের উইকেটটার (মুমিনুল হকের) সাথে।'

এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ফিল্ডারদের বাছাই করতে গেলে তার নাম আসবেই। ফিল্ডিংয়ে অসাধারণ ফিলিপস, ব্যাট হাতে ভয়ঙ্কর। এবার অফ স্পিনেও দেখাচ্ছেন মুন্সিয়ানা। কেউ বলতে পারেন, আর কত কী করবেন তিনি! ফিলিপস হয়তো বলে উঠবেন, উইকেটরক্ষক ট্যাগটা মুছে বিশেষজ্ঞ অলরাউন্ডার তকমা লাগানো যে এখনও বাকি!

Comments

The Daily Star  | English

US tariff at 20% 'satisfactory' says Khosru

Will comment after knowing full details of the deal

16m ago