সাকিব-মোস্তাফিজের নৈপুণ্যে বাংলাদেশের ৫ রানের রোমাঞ্চকর জয়

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শেষ ওভারে হাতে ২ উইকেট নিয়ে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের দরকার দাঁড়াল ১৪ রান। তৃতীয় বলে ব্লেসিং মুজারাবানি ছক্কা হাঁকানোয় ভীষণ জমে উঠল ম্যাচ। তবে ঘুরে দাঁড়াতে একদমই সময় নিলেন না তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি স্পিনে মুজারাবানির পর রিচার্ড এনগারাভাকেও ঝুলিবন্দি করলেন তিনি। ফলে শঙ্কা এড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত জয় আদায় করে নিল বাংলাদেশ।

শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শতরানের উদ্বোধনী জুটির পরও বাংলাদেশ ১৯.৫ ওভারে অলআউট হয় ১৪৩ রানে। জবাবে দুই বল বাকি থাকতে ১৩৮ রানে থামে জিম্বাবুয়ে। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলতে সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে না থাকা সাকিব বল হাতে ছিলেন বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার। ৪ উইকেট নিতে ৩.৪ ওভারে তার খরচা ৩৫ রান। তার মতোই এই ম্যাচের একাদশে ফেরা বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান কাড়েন নজর। ৩ উইকেট নিতে ৪ ওভারে তিনি দেন মাত্র ১৯ রান, জেতেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। আর সিরিজজুড়ে নজর কেড়ে নেওয়া ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদ ছন্দ ধরে রেখে ৪ ওভারে ২০ রানে শিকার করেন ২ উইকেট।

ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে উল্লাসের মুহূর্ত এনে দেন তাসকিন। পুল শটে টাইমিংয়ে গড়বড় করে মিড অনে সাকিবের তালুবন্দি হন ব্রায়ান বেনেট। ৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি জিম্বাবুয়ের ওপেনার।

দলীয় শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা চালান আরেক ওপেনার টাডিওয়ানাশে মারুমানি ও অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। তারা মনোযোগী ছিলেন তাড়াতাড়ি রান ওঠানোয়। তবে এই জুটিকে মাথাব্যথার কারণ হতে দেননি তাসকিনই। তার ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান রাজা। চতুর্থ ওভারে ১০ বলে ৪ চারে ১৭ রানে আউট হন তিনি। ভাঙে ১৯ বলে ২৮ রানের জুটি।

এই ধাক্কা সামলে না উঠতেই জিম্বাবুয়ের ইনিংসের আরেক আঘাত। পরের ওভারে সাকিব আল হাসান বাঁহাতি স্পিনে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মারুমানিকে। ১৩ বলে ৩ চারে তিনি করেন ১৩ রান।

জিম্বাবুয়ে পাওয়ার প্লে শেষ করে ৩ উইকেটে ৩৮ রান তুলে। চাপ এড়িয়ে প্রয়াস থাকলেও তাদের চতুর্থ উইকেট জুটিকেও বড় হতে দেয়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের দশম ওভারে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ক্লাইভ মাদান্দে। ১৮ বলে ১ চারে তার রান ১২। জোনাথান ক্যাম্পবেলের সঙ্গে তার জুটি থামে ২৫ বলে ২৯ রানে।

এই ওভারের প্রথম বলেই অবশ্য উইকেট পেতে পারতেন রিশাদ। তবে স্লগ সুইপে ক্যাম্পবেল ক্যাচ তুললেও ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে তা লুফে নিতে ব্যর্থ হন তাওহিদ হৃদয়। ব্যক্তিগত ১১ রানে বেঁচে যান ক্যাম্পবেল। উল্টো আসে একটি রান।

৫৭ রানে ৪ উইকেট তুলে নিলেও জিম্বাবুয়ের ইনিংসের দ্বিতীয় অংশে স্বস্তিতে থাকতে পারেনি বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে ৩০ বলে ৩৫ রান এনে ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফিরিয়ে আনেন ক্যাম্পবেল ও রায়ান বার্ল। এর মধ্যে ছন্দহীন তানজিম হাসান সাকিবের করা ১৩তম ওভার থেকেই আসে ২০ রান।

১৫তম ওভারে জোড়া শিকার করে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় ব্রেক থ্রু এনে দেন মোস্তাফিজ। ২০ বলে ১৯ করা বার্লের পাশাপাশি লুক জঙ্গুয়েকে ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন তিনি। এরপর আক্রমণে ফিরে জিম্বাবুয়ের আশার আলো হয়ে জ্বলতে থাকা ক্যাম্পবেলকে তুলে নেন সাকিব। ২৭ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন ক্যাম্পবেল।

তবুও ওয়েলিংটন মাসাকাদজার কল্যাণে লড়াই চালিয়ে যায় সফরকারীরা। কিন্তু সাকিব ও মোস্তাফিজ দুই পাশ থেকে চেপে ধরলে লক্ষ্য থেকে দূরে থামতে হয় তাদের। ১০ বলে ১১ করে আউট হন ফারাজ আকরাম। মুজারাবানি থামেন ৫ বলে ৮ রানে। মাসাকাদজা ২ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৮ বলে ১৯ রানে।

এর আগে বড় পুঁজির স্বপ্ন জাগিয়েও দেড়শর নিচে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। অথচ তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকারের দুর্দান্ত উদ্বোধনী জুটিতে এসেছিল ৬৮ বলে ১০১ রান। এরপর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ব্যাটিং লাইনআপ। স্রেফ ৪২ রানে পড়ে যায় ১০ উইকেট।

সিরিজে দ্বিতীয় ফিফটিতে ৩৭ বলে ৫২ রান করেন তানজিদ। আরেক ওপেনার সৌম্য করেন ৩৪ বলে ৪১ রান। আর কেউই উইকেটে থিতু হতে পারেননি। তিন নম্বরে নামা তাওহিদ হৃদয় করেন ৮ বলে ১২ রান। বাকিরা সবাই দুই অঙ্ক ছুঁতে অসফল। জিম্বাবুয়ের হয়ে স্রেফ ২০ রানে ৩ উইকেট নেন মিডিয়াম পেসার জঙ্গুয়ে। এছাড়া, বেনেট ও এনগারাভা নেন দুটি করে উইকেট।

Comments

The Daily Star  | English

Victory day today: A nation born out of blood and grit

The tide of war had turned by mid-December in 1971. The promise of freedom was no longer a dream. It had hardened into tangible certainty.

7h ago